নিত্যপণ্য বাজারে নাভিশ্বাস

পেঁয়াজে সুখবর নেই। নিত্যপণ্যের বাজারের চলছে অস্থিরতা। চাল-ডাল-তেলসহ শীতের শাক-সবজির দাম এখনো আকাশ ছোঁয়া। সবার অজান্তে গত ১৫ দিনে সব ধরণের ওষুধের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। নিত্যপণ্যের বাজারে গিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। চরম বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। রাজধানীতে নিত্যপণ্যের দাম এখনও অনেকের নাগালের বাইরে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের মনিটরিং না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অক্টোবর মাসে সরকার সরাসরি আমদানির মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে বাজার ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়তো না। ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর না করে সরকারের সরাসরি পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে; অথচ তাদের সমন্বয় নেই। তাই পৃথক বিভাগ বা মন্ত্রণালয় দরকার।

গতকার শুক্রবার রাজধানীর শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, ধনিয়া, ধোলাইপাড়, ফকিরেরপুল, রামপুরা, মালিবাগ, মালিবাগ রেলগেট বাজার, কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান, গুলিস্তানের ক্যাপ্তান বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জানা গেছে, মূলত বাজারে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নিত্যপণের দাম। ক্রেতাদের অভিযোগ একাদশ সংসদের বেশিরভাগ মন্ত্রী ব্যবসায়ী হওয়ায় কৌশলে সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। তাই পেঁয়াজ-চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজারে কার্যকরি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং নেই। যে কারণে ধুমধাম করে একটার পর একটা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রির অপরাধে সাজা দেয়া হলেও সেটাকে লোক দেখানো বলে মনে করছে মানুষ। কাপ্তান বাজারের আবদুর রশিদ নামের এক ক্রেতা বললেন, সরকার এবং প্রশাসনের অনেকের পকেটে পেঁয়াজসহ চাল-ডাল তেলের বাড়তি মূল্যের পয়সা না গেলে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর হতো। যে দেশে বিরোধী দল ছোট্ট মিছিল করতে পারে না পুলিশের ভয়ে; সে দেশে সকাল বিকেল পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির রহস্য কি? আবু তালেব নামের একজন বলেন, এনবিআর পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আফিসে এনে জামাই আদর করে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। এতে পণ্যের দামে হিতে বিপরীত হয়েছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বুঝে গেছে তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নেই।

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার বিষয়ে সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে কোনো বিশেষ চক্র এভাবে একটার পর একটা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু ভোক্তাদের অভিযোগ, দেশের পরিস্থিতি এমন যে সাধারণ গরিব মানুষের অধিক দামে পণ্যক্রয়ের কষ্ট বোঝার বা দেখার কেউ নেই। কোনো কিছুর উপরই যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।

এবছর সবচেয়ে আলোচিত পণ্যের নাম পেঁয়াজ। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় হঠাৎ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ৬ থেকে ৮ গুন। পণ্যটির জন্য শুরু হয় হাহাকার। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পেঁয়াজ সঙ্কট কাটাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হয়। তুরস্ক, মিশর, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় কমতে থাকে দাম। ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পেঁয়াজের দর। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতে ফের তা বেড়ে ২৫০ টাকা ওঠে। বেশকিছু দিন ধরে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে পেঁয়াজ বাজার। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ আমদানি, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ঘোষণায় কোনো সুফলই দেখছেন না সাধারণ ক্রেতারা। বরং ক্রেতারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারদর নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের শতভাগ ব্যর্থতায়।

তবে আশার কথা নতুন পেঁয়াজ উঠেছে বাজারে। সাধারণ ক্রেতা নতুন দেশি পেঁয়াজ ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ক্রেতাদের মধ্যে আমদানি করা পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজ ক্রয়ে বেশি আগ্রহী দেখা গেছে। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৩০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আমদানি করা বিভিন্ন বার্মা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে, মিশর ২০০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ (পেঁয়াজসহ পাতা) বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে।

বাজরের পণ্যের দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরাতে প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও অতি মুনাফার আশায় দাম কমাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। শনির আখড়ায় অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি-আনছার দিয়ে সরকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে; বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না? মূলত বাজার সিন্ডিকেটের পেছনে রয়েছে সরকারের রাঘব-বোয়ালরা। যাত্রাবাড়ীর বাজারের হাসিনা বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, সরকারের কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না। ব্যবসায়ীরা একের পর এক দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন অথচ বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। অগ্রহায়ণ মাসে শীতের সবজি উঠেছে; অথচ দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
হাসানউদ্দিন নামের ফকিরেরপুল বাজারের এক ক্রেতা বলেন, এখন কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে আর কমে না। দেশে এখন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে শক্তিশালী, তারা সব কিছুর মূল্য ঠিক করে দেয়। পরিবহন সেক্টরের মতোই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সরকার যেন অসহায়। রামপুরা বাজারের আল-আমিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা শফিকুল জানান, এখন পাইকারি বাজারে দাম অনেক বেশি, তাই খুচরাতে প্রভাব আছে। তবে দাম বেশি না পাইকারি বাজার থেকে সামান্য বেশি রেখে পণ্য ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ বাজারে পর্যাপ্ত এলে দাম কমবে। শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা টিটন রায় বলেন, আমদানি না থাকায় পেঁয়াজের দাম বেশি। এর আগে ভারতের পেঁয়াজ সরবরাহ বেশি ছিলো তাই দাম কম ছিলে, এখন সেটা নেই। তাছাড়া বিমানযোগে আসা পাকিস্তানি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবে আমদানি বেশি হলে দাম কমবে। তবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) খোলা বাজারে ট্রাকসেলে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। দীর্ঘ সময় ধরে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে অনেককে।

অগ্রহায়ণ মাসে শীতের সবজিতে বাজার ভরা। ফুলকপি, পাতাকপি, মুলা, শালগম, শিম, পালংশাক, মুলাশাক, সরিষা শাকের সরবরাহ বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। সামনে সরবরাহ আরও বাড়বে। ফলে সবজির দাম আরও কমবে। বাজারে দোকানে দোকানে ঘুরে দেখা গেছে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, শসা, গাজরের দামে স্বস্তি মিলছে না। এই সবজিগুলো এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। খিলগাঁওয়ে ব্যবসায়ী খায়রুল বলেন, শিম, টমেটো, মুলা, শালগমের দাম কমতে শুরু করেছে। এখন দিন যত যাবে, আস্তে আস্তে সব ধরনের সবজির দাম কমবে। অনেক সবজি ৩০ টাকা কেজির মধ্যে পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে নতুন আসা গোল আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০-১০০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি, গত সপ্তাহেও সবজিটির দাম একই ছিল। ফুলকপি ও বাঁধাকপি আগের সপ্তাহের মতো ৪০-৬০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে আগের মতো ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি শিম ৫০-১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে ছোলা, খেসারি, মসুর ডাল, বুট। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, খেসারি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। বাজারগুলোতে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পেঁপে ৬০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ৯০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০০ টাকা, লেবু হালি মান ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা। প্রতি কেজি বেগুন, কচুরলতি, করলা, পটল, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে। ধুনদল, ঝিঙা, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। প্রতি আঁটি লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাল শাক, পালং শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, পুঁইশাক ও ডাটা শাক ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজির মধ্যে পটল ৪০-৫০, বরবটি ৬০-৭০, কচুর লতি ৭০-৮০, করলা ৬০-৭০, ধুন্দুল ৭০-৮০, গাজর ৩০-৪০, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। শনির আখড়া বাজারের এক গোশত ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত গরুর গোশতের দাম ৫২৫ টাকা, খাসির গোশত ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। ব্রয়লার মুরগি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে টানা এক সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের মধ্যে সব ধরণের ওষুধের দাম বেড়েছে। ওষুধ ভেদে দাম বেড়েছে শতকরা ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম : বাজারে শীতের সবজি বাড়লেও কমছে না দাম। নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের দাম এখনও নাগালের বাইরে। মাছের সরবরাহ বাড়লেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। স্বস্তি শুধু মুরগি এবং ডিমে। বন্দরনগরীর কাঁচাবাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারে শীতের সবজি বাড়ছে। প্রতিদিন বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে ট্রাকে সবজি আসছে। তবে কমছে না দাম।

বাজারে ফুলকপি প্রতিকেজি ৬০-৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা, শিম ৮০-৯০ টাকা, দেশি শিম ১০০-১২০ টাকা, মুলা ৪০-৬০ টাকা, টমেটো ৭০-৯০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, কাকরোল ৫০-৫৫ টাকা, ওলকচু ৭০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, নতুন আলু ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতিকেজি ৩০-৩৫ টাকা, বরবটি ৬০-৭০ টাকা, ঢেড়স ৫০-৬০ টাকা, তিতা করলা ৭০-৭৫ টাকা, কচুর ছড়া ৬০-৬৫ টাকা, পেঁপে ২০-২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৫-৩৫ টাকা, লতি ৪০-৪৫ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা, ক্ষিরা ৭০-৮০ টাকা, ঝিঙে ৫০-৫৫ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, শিমের বিচি ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যশোর : যশোর অঞ্চলের হাটবাজারে সবজির মূল্য বেড়েই চলেছে। যশোর হলো সবজি উৎপাদনের শীর্ষে হলেও এখানে মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। সবজি উৎপাদনে কোন ঘাটতি নেই, হাটবাজারে সবজি সরবরাহও স্বাভাবিক। মূলতঃ মূল্য বাড়ছে সিন্ডিকেটের কারণে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় চাষি ও ভোক্তা উভয়েই আর্থিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবজি ছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ছেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ একেবারেই ঢিলেঢালা।
কুমিল্লা : অগ্রাহায়ণের মাঝামাঝিতেই শীতের সবজিতে ভরপুর হয়ে উঠেছে হাটবাজার। পুরো পৌষমাস জুড়ে খেত থেকে আরও সবজি বাজারে উঠবে বলে জানান স্থানীয় আড়তদাররা। দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে বলা চলে। তবে সবজি বিক্রি নিয়ে কৃষকদের অভিযোগ, আড়ত ঘিরে দালাল ও মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের উৎপাত কেউই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা।

গতকাল সকালে কুমিল্লা নগরীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে স্থান পাওয়া শাকসবজি বর্তমানে বেশি দামে মিলছে। ক্রেতারা বলছেন বিক্রেতারা আড়ত থেকে বেশিদামে সবজি কিনছে এমন অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে ক্রেতার পকেট থেকে। শাক প্রতি আঁটি ৩০ থেকে ৪০টাকা। শীতকালীন সবজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে শীতকালীন সবজির বাজার।

এদিকে কৃষকদের অভিযোগ, সবজি নিয়ে আড়তে পা রাখতেই দালাল আর মধ্যস্বত্বভোগীর টানাহেঁচড়ায় তারা হতবম্ব হয়ে পড়েন। নামমাত্র লাভে কৃষকের হাতে সবজির মূল্য গুজে দেয়া হচ্ছে। রাজগঞ্জ বাজারের কাঁচামালের আড়তদার জাহাঙ্গীর আলম ও হাজী সেলিম জানান, বর্তমানে সবধরণের শাক-সবজির বাজারদর বেশি। কৃষকদেরকে তাদের উৎপাদিত সবজির ন্যায্য দাম দিতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতারা জানান, আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি দাম নিতে হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস কুমিল্লার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুরজিত চন্দ্র দত্ত জানান, আধুনিক প্রযুক্তিতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শসহ সবধরণের লজিষ্টিক সার্পোট দেয়ায় এবং আবহাওয়া সময়োপযোগী হওয়ায় এবারে কুমিল্লা জেলায় শীতকালিন সবজির বাম্পার ফলন হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হলে শাকসবজির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে আর কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবে।

সাভার : ঢাকার সাভারে এবার শীতকালিন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। পাইকারী বাজারে চাষীরা সবজির ভাল দাম না পেলেও খুচড়া বাজারে সবজির দাম নাগালের বাইরে। সাভারের হাড়িভাঙ্গা এলাকায় ছোট্ট একটি পালং শাকের ক্ষেত ৯৫হাজার টাকায় কিনেছেন ছলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ১১জন লেবার নিয়ে ক্ষেতের পালং শাক তুলতে হচ্ছে। প্রতি লেবারের হাজিরা ৬০০টাকা। শাক তোলার পর যাত্রাবাড়ি পাইকারী আড়তে নিয়ে যেতে হবে। প্রতি আটি শাক পাইকারী দরে ১০টাকা করে বিক্রি হবে। তবে বাজার বুঝে দাম আরও কমতেও পারে।
সাভারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাভারের সবজি আমরা খুব কমই পাই। সাভারের চাষীরা ঢাকার পাইকারী বাজারে নিয়ে বিক্রি করে। তবে উত্তরবঙ্গের সবজিগুলো সাভারে বেশি আসে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, উত্তরবঙ্গের দিকে সবজির দাম খুবই কম। কিন্তু সেই সবজি ঢাকায় আসতে আসতে দাম ৩/৪গুন বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এক দিকে কৃষক ঠকছে অপরদিকে ভোক্তা ঠকছে। আর এর মাঝে একশ্রেণীর ব্যাবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন ব্যায় একটা বড় কারণ রয়েছে। উত্তরবঙ্গের থেকে একটি সবজিবাহী ট্রাক রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছতে রাস্তায় দফায় দফায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। যার সব কিছু এসে দাড়ায় ভোক্তার ঘাড়ে।
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : হেমন্তের শেষ বেলায় শীত ছুঁই ছুঁই। এতোদিনে মৌসুমিসহ শীতকালীন সব্জি বাজারে সয়লাব হলেও দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এতে বিপাকে ক্রেতারা। তবে বেশি মুনাফা লোভে এখানেও রয়েছে মধ্যস্বত্তভোগীদের সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের কারনে অনেকাংশে কৃষকরাও দাম পাচ্ছেনা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা বেশি দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে প্রায় প্রতিটি সব্জিই এখন সাধারন ক্রেতাদের হাতের নাগালেই বাইরে। অন্যদিকে পাইকারী বাজারে খুচরা বাজারের তুলনায় দাম অনেক কম হলেও মধ্যস্বত্তভোগীদের অতি মুনাফায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে পূর্বাচলের সব্জি রাজধানীর বাজারে যায় বলে জানান কাঞ্চন পৌর মার্কেট কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ। তিনি জানান, ঢাকা থেকে সব্জি পরিবহনে নানা স্থানে চাঁদা দিতে হয়। তাছাড়া আড়ৎ থেকে চড়া দামে কিনতে হয়। তাই বেশি দাম নেয়া ছাড়া কোন গতি থাকে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, এসব সব্জি বাজারে এলে দাম কমে যাবে আশা করি। আগাম সব্জি সব সময় বেশি দাম থাকে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, সব্জির দাম একটি অঞ্চলে কম বা বেশি তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কিছু করার থাকে না। সূত্র: ইনকিলাব