রাখাইনে গণহত্যা বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে: আইসিজে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যামূলক সহিংসতা বন্ধে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। সেইসঙ্গে এ ধরনের সহিংতার সাক্ষ্যপ্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার রায়ে এই আদেশ দিয়েছে আইসিজে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে রাখাইনে এখন যে রোহিঙ্গারা আছেন, তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যেকোনো নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো গণহত্যায় না জড়ায়, উসকানি না দেয়, কিংবা নির্যাতনের চেষ্টা না করে সেজন্য ব্যবস্থা নিতে মিয়ানমারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসির

আদেশে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে আগামী চার মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে হবে এবং এরপর এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি ছয় মাস পর পর আদালতকে এ বিষয়ে অবহিত করতে হবে।

আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেলের সভাপতিত্ব করা বিচারক আবদুলকাভি ইউসুফ আদালতের সিদ্ধান্তের একটি সারাংশ তুলে ধরে বলেন, রোহিঙ্গারা এখনও ‘গণহত্যার শিকার হওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে’। আদেশে আরও বলা হয়, ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদে যেসব কর্মকাণ্ড বা আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা প্রতিরোধে মিয়ানমারকে তার ক্ষমতার মধ্যে থাকা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে মিয়ানমারকে চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘর্ষ, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। এ নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজেতে এ মামলা করে গাম্বিয়া।

এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগে শুনানি হয় ২০১৯ সালের ১০-১২ ডিসেম্বর।

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদান ও রাখাইনে গণহত্যার আলামত নষ্টের বিভিন্ন অভিযোগের ওপর এই শুনানি হয়। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মামলা করা গাম্বিয়া মিয়ানমারের গণহত্যার আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতকে জরুরিভাবে আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানায়।

গাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিচারমন্ত্রী আবুবাকার মারি তামবাদো ওই সময় এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের চালানো গণহত্যার বিচার ও জবাবদিহি চাইতে এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক আচরণ যা সব রাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক তাকে সমর্থন ও জোরদার করতে গাম্বিয়া এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।’

তবে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী ও আদালতে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করা নোবেল জয়ী অং সান সু চি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলাটি ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার এখতিয়ার জাতিসংঘের আদালতের নেই। গণহত্যার অভিযোগ খারিজ করতে বিচারককে তিনি আহ্বান জানান।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) অনুসারে, ১৯৯৩ সালের আন্তর্জাতিক আদালতে প্রথম গণহত্যা বিষয়ক মামলায় সার্বিয়ার বিরুদ্ধে অস্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। কারণ ওই মামলায় প্রমাণিত হয়েছিল যে, সার্বিয়া বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় গণহত্যা প্রতিরোধ ও শাস্তি স্থাপনে দায়িত্ব লংঘন করেছিল।