রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়ে রিপোর্ট দিতে ৪ মাস সময় মিয়ানমারকে

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মিয়ানমার কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে- এ বিষয়ে আগামী চার মাসের মধ্যে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করতে বলেছে নেদারল্যাডন্সের দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিজে)।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যায় চালানোর অভিযোগ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।

রায়ে আরও বলা হয়, রাখাইনে বসবাসরত যে সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের সুরক্ষা দেবার জন্য মিয়ানমার সরকারকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরতে হবে। সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যে কোনো ধরণের নিরাপত্তা বাহিনী যাতে গণহত্যা না চালায় কিংবা উস্কানি না দেয় সেজন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত যেসব অভিযোগ এসেছে, সে সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দেবার জন্য মিয়ানমার কী ধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে চার মাসের মধ্যে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর প্রতি ছয়মাসে একটি করে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এসব প্রতিবেদন গাম্বিয়ার কাছে তুলে ধরা হবে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার কাউকে ফেরত নেয়নি।

এরপর রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমারের চালানো নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, সে ব্যাপারে কিছু করার জন্য বিশ্ববাসীকে তাগিদ দেওয়া।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত বছরের ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি চলে। ১০ ডিসেম্বর গাম্বিয়ার প্রতিনিধি দল আদালতে গণহত্যার বিষয়ে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করে। শুনানিতে গাম্বিয়ার পক্ষে মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির বিচারমন্ত্রী আবুবাকার তাম্বাদু।

পরদিন ১১ ডিসেম্বর মিয়ানমারের নেতৃত্ব দেন মিয়ানমারের সরকার প্রধান অং সান সু চি। সেখানে তিনি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানি শেষ হয়।

দ্য হেগ শহরে এই শুনানিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। ওই দলে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনজন প্রতিনিধিও ছিলেন।

গাম্বিয়ার বিচারমন্ত্রী আবুবাকার তাম্বাদু বিবিসিকে বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক বাসিন্দারা সংগঠিত হামলা চালাচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে, মায়ের কোল থেকে শিশুদের ছিনিয়ে নিয়ে জ্বলন্ত আগুনে ছুঁড়ে মারছে, পুরুষদের ধরে ধরে মেরে ফেলছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে এবং সবরকমের যৌন নির্যাতন করছে।

এটিকে ১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, রোয়ান্ডায় টুটসিদের ওপর যেরকম অপরাধ করা হয়েছিল, এটা সেরকমই মনে হচ্ছিল। এখানে সেই একই রকম গণহত্যার সব বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। এটার মাধ্যমে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে চিরতরে ধ্বংসের চেষ্টা করছে মিয়ানমারের সরকার। সূত্র: বিবিসি