কে হচ্ছেন অধিনায়ক? বিসিবির বাছাইয়ে ৩ জন

BangladeshnCricket Board bcb

শুক্রবার ওয়ানডে দলের অধিনায়ক থেকে বিদায় নিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

মাশরাফির অব্যাহতির পর বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নির্বাচনের গুরুদায়িত্ব পড়েছে বিসিবির ওপর।

মাশরাফির পর স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়কত্বের ভার এসে পড়ে সাকিব আল হাসানের ওপর।

কিন্তু আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে মাঠের বাইরে রয়েছেন সাকিব। যে কারণে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে তা নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার বিকালে এ নিয়ে মুক্ত আলোচনার বৈঠকে বসবে বিসিবি। বোর্ডসভার মূল আলোচ্যসূচিই হচ্ছে– কে হবেন অধিনায়ক?

তবে সে বৈঠকের আগেই তিনজনের নাম বারবার উচ্চারিত হচ্ছে বোর্ড পরিচালকদের মুখে।

জ্যেষ্ঠ ওই তিন খেলোয়াড় হচ্ছেন – মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। তাদের মধ্য থেকেই একজনকে অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত করবেন বিসিবি সভাপতি। এমন আভাসই দিয়ে আসছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, এ তিনজনের অধিনায়ক হওয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আর সেই সময়ে তাদের পারফরম্যান্স ও দলীয় সাফল্যকে মূল বিবেচনায় আনা হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এ ক্ষেত্রে মুশফিকের অভিজ্ঞতার পাল্টাটা বেশ ভারী। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মুশফিকের কাছ থেকেই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন মাশরাফি।

পরিসংখ্যান বলছে, ৩৭ ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন মুশফিক। এতে ১১ জয়ের বিপরীতে ২৪ হার রয়েছে তার। অর্থাৎ মুশফিকের সাফল্যের হার ৩১.৪২ শতাংশ।

মুশফিক টাইগার দলে ধারাবাহিক পারফর্মার। এছাড়া অধিনায়ক থাকাকালীন চাপ সামলে ভালো ব্যাট করেছেন মুশফিক। উইকেটের পেছনেও তার চোখ ছিল সদাপ্রস্তুত।

এসব কারণ দেখিয়ে বিসিবি মুশিকেই বেছে নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

অধিনায়কত্ব করার ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও। সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব করেছেন রিয়াদ। বর্তমান টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক তিনি।

তবে সম্প্রতি মাহমুদউল্লাহর ফর্ম তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। পাক সফরে বাজে পারফরম, করায় টেস্ট দল থেকে ইতিমধ্যে বাদ পড়েছেন।

এ নিয়ে কোচ ডমিঙ্গো ও বিসিবির সঙ্গে জলঘোলা কাণ্ড আর গুজবও ছড়িয়েছে। তাই ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহকে নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে কিছুটা সংশয়ে আছে বোর্ড। তিন সংস্করণে তার নিয়মিত না হতে পারাই এর কারণ।

এ দুজনের পরে অটো চয়েজে পড়েছেন তামিম ইকবাল। দলে নিয়মিত হয়ে ব্যাটে ভেলকি দেখাচ্ছেন। রেকর্ডের পর রেকর্ড করে ফর্মের তুঙ্গে আছেন তামিম।

তবে ফর্ম যতই ভালো থাকুক অধিনায়কত্বের দৌড়ে মুশফিক-রিয়াদ থেকে বেশ পিছিয়ে আছেন তামিম। অধিনায়কত্ব হিসেবে তামিমের অভিজ্ঞতা মাত্র তিনটি ওয়ানডে। আর ওই তিন ওয়ানডে ম্যাচেই ভরাডুবি হয়েছিল বাংলাদেশের।

তামিমের নেতৃত্বে গত জুলাইয়ে শ্রীলংকায় তিনটি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। ওই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। দল তো ভালো করেইনি, অধিনায়কত্বের চাপে তিনি নিজে কম রানে আউট হয়ে এসেছেন।

তাই বিসিবির পরিচালকদের মধ্যে অনেকের মতে, তামিম দলের সেরা ব্যাটসম্যান। তার কাঁধে অধিনায়কত্ব দিলে, দল তার সেরা ব্যাটসম্যানকেও হারাতে পারে।

কেননা বাঁহাতি এই ওপেনারকে নিয়ে যে কথা প্রচলিত- সহঅধিনায়ক হিসেবে যতটা ভালো তামিম, অধিনায়ক হিসেবে ততটা নন।

চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে পঞ্চপাণ্ডবের এই তিন অন্যতমের একজনকেই যে অধিনায়ক করা হবে সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান।

তিনি বলেছেন, ‘যে দলে নিয়মিত, যার অভিজ্ঞতা আছে, অধিনায়ক হিসেবে চাপ নিতে পারে, সাহসী, এমন কাউকে বেছে নেব আমরা। সে ক্ষেত্রে সিনিয়র তিনজনের একজনই হয়তো হবে।’

এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ওয়ানডে তে আমরা যাকে অধিনায়ক করব তাকে নিয়ে লম্বা মেয়াদেই পরিকল্পনা রয়েছে।

সে ক্ষেত্রে নতুন অধিনায়ক তার যোগ্যতা প্রমাণে তিন-চারটা সিরিজ সময় পাবেন বলে জানান আকরাম খান।

তিনি বলেছেন, ‘ওয়ানডেতে আমাদের দলের যে অবস্থা, প্রস্তাব দেব অন্তত তিন-চারটা সিরিজ পর্যন্ত যেন থাকে। যাতে দলকে সে গুছিয়ে নিতে পারে।’

কাছাকাছি মত দিয়েছেন বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস।

তবে তিনি অধিনায়ক নির্বাচনে ২০২৩ বিশ্বকাপকে ফোকাসে আনতে চান।

তার মতে, ‘আমরা চাই এমন একজনকে, যে ২০২৩ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করতে পারে।’

জানা গেছে, এই তিন খেলোয়াড়ের মধ্যে মুশফিক অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পাক সফর বিষয়ে তার প্রতি নাখোশ বিসিবি।

মুশফিক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে খেলতে যাচ্ছেন না তিনি।

তবে আজ বোর্ডসভায় মুশফিক অধিনায়ক হিসেবে চূড়ান্ত হলে ৩ এপ্রিলের ওয়ানডে ম্যাচের অধিনায়কত্ব কে করছেন? সে প্রশ্ন থেকেই যায়।