শখের বসে সূর্যমুখী চাষ মণিরামপুরের কলেজ ছাত্র ফারুকের

যশোরের মণিরামপুরের খেদাপাড়া গ্রামের কৃষক পরিবারের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ফারুক হোসেন। সম্প্রতি লেখাপড়ার পাশাপাশি চাষ কাজ শুরু করেছেন তিনি।

কৃষি অফিসের উদ্যোগে এবার পিতা জুলফিক্কার আলীর একবিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন ফারুক। ফুলের প্রতি ভালবাসা আর নিরাপদ ভোজ্য তেল উৎপাদনের লক্ষে এই চাষে ঝুঁকেছেন তিনি।

মণিরামপুর-খেদাপাড়া সড়কের খড়িঞ্চি পাওয়ার হাউজের বিপরীতে মাঠে বাতাসে দুলছে ফারুকের সূর্যমুখীর ক্ষেত। দূর থেকে তাকালেই প্রতিটি গাছে ফুটে থাকা ফুল মুগ্ধ করছে পথচারীদের।

সরকারের সহায়তায় ফারুকের মত উপজেলার চাকলা গ্রামের চাষী শহিদুল ইসলাম এবং ভোজগাতী গ্রামের নারী কৃষক আন্না খাতুনও এক বিঘা করে জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা তাদের।

উপজেলা কৃষি অফিস বলছেন, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে মণিরামপুরে সূর্যমুখীর চাষ হতো। টিয়াপাখির উৎপাত থাকায় এবং বাজারে সোয়াবিন তেলের আধিক্যের কারণে এই এলাকা থেকে সূর্যমুখীর চাষ একেবারেই হারিয়ে যায়। তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তিগত বিস্তারের লক্ষে বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মণিরামপুরে পরীক্ষামূলক এস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখীর তিনটি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্লটগুলোতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ধানের থেকে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী কৃষি অফিস।

প্রতি বিঘায় ১১ থেকে ১২ মণ সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্লটগুলোতে। যার মণপ্রতি বাজার দর দুই হাজার ৩০০ টাকা। আর চাষের ১২০ দিনের মধ্যেই এই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।

ফারুক হোসেন বলেন, যশোর সরকারি এমএম কলেজে ইসলামের ইতিহাসে মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আমি। পিতার ১৪-১৫ বিঘা জমি থাকলেও কখনো চাষ কাজে মন দিইনি। ফুলের প্রতি ছোট বেলা থেকেই একটা দুর্বলতা আমার। সেই দুর্বলতা থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দর্পন বিশ্বাসের উৎসাহে একবিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছি। কৃষি অফিস আমাকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ ও সার বীজ দিয়ে সহায়তা করেছেন। গত ২২ ডিসেম্বর জমিতে বীজ বপণ করেছি। প্রায় সব গাছেই ফুল ফুটেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকেরা ফসল দেখতে আমার জমিতে আসছেন। এসব দেখে আমার খুব ভাল লাগছে। আর কয়েকদিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলতে পারব বলে আশা করি।

ফারুক আরো বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়াও এক বিঘা জমির ফসল ঘরে তুলতে আমার ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হবে। লাভ কেমন হবে বুঝতে পারছি না। যদি লাভ দেখি আগামীতে আরো দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়াবো।

খেদাপাড়া গ্রামের অপর কলেজ ছাত্র রাকিব হোসেন বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি আমিও চাষ কাজ করি। ফারুক যদি লাভবান হয় তাহলে আগামীতে আমিও এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করব।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার বলেন, ১৫-২০ বছর আগে মণিরামপুরে সূর্যমুখীর চাষ হত। কিন্তু টিয়াপাখির ব্যাপক উপদ্রব থাকায় এবং বাজারে সয়াবিন তেলের ব্যাপকতায় কৃষকরা এই চাষ বন্ধ করে দেন। বর্তমান টিয়াপাখির উপদ্রব কমেছে। ধানের থেকে লাভজনক এবং নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত কোলেষ্টরলমুক্ত হওয়ায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে মণিরামপুরে সূর্যমুখীর তিনটি প্রদর্শনী প্লটের আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনী প্লট দেখে ইতিমধ্যে অনেক চাষী সূর্যমূখী চাষ করতে আমাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। আশা করছি আগামীতে মণিরামপুরে এই চাষ বৃদ্ধি পাবে।