করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশকে যেসব পদক্ষেপ নিতে বলল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে করোনাভাইরাস মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। ভয়াবহ সেই পরিস্থিতি ঠেকাতে সীমান্ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণজমায়েত বন্ধ করে দেয়াসহ দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলেছে সংস্থাটি।

মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ড. পুনাম ক্ষেত্রপাল সিং এসব কথা বলেন। বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও উত্তর কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের প্রায় সবগুলোতেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় খুব দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে এসব দেশের সরকারগুলোকে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের হু পরিচালক বলেন, এ অঞ্চলে দিন দিন আরও বেশি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এ ভাইরাস মোকাবিলায় আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং তা করতে হবে দ্রুত।

হু জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ‘কিছু কিছু দেশ সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে বড় মাত্রায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দিকে এগিয়ে চলেছে।

লাগাতার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নিশ্চিত হতে পরীক্ষা, আক্রান্তকে চিহ্নিত করা, চিকিৎসা দেয়া, কোয়ারেন্টাইন করা ও তারা কাদের সঙ্গে মিশেছে তা খুঁজে বের করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে বলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে জোর পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, মানুষের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে হবে। এই ব্যাপারে আরও জোর দিতে হবে। এটি করতে পারলেই করোনার সংক্রমণ বহু মাত্রায় কমানো সম্ভব। আমাদের এই মুহূর্তেই কাজ শুরু করতে হবে।

বুধবার আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪১৮ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৬৩। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮২ হাজার ২২৬ জন। মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সুস্থ হওয়ার হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।

গত ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে ভাইরাসটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হয় চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে। বর্তমানে দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা একদমই নিচে। ইতিমধ্যেই চীনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা স্বাস্থ্য কর্মীদের আনুষ্ঠিকভাবে উহান থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি হয়েছে মোট ৩ হাজার ২২৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭ জন মানুষ।

চীনে করোনার ভয়াবহতা শেষ হলেও বাড়ছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা দেশটির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার বরাত দিয়ে জানায় ইতালিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৫০৬ জনে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৫০৩।

বর্তমানে দেশটি লকডাউন অবস্থায় আছে। সব শিক্ষা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যান চলাচলসহ সব কিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। খোলা রয়েছে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসি। এছাড়াও লকডাউন অমান্য করে করে বের হলে জরিমানা করা হচ্ছে। এর আগেই করোনার প্রভাব ঠেকাতে সরকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়াও ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের স্পোর্টস ইভেন্ট স্থগিত করা হয়েছে।

ইরানেও করোনার সংক্রমন বাড়ছে। ভারতে কয়েকজন মারা গেছেন। বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রী কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

বাংলাদেশেও করোনায় প্রথমবারের মতো মারা গেছেন একজন। আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন।