ভারতের আবাসিক হোটেলে আসমা হত্যা মামলার আসামী ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার

আবুল কাশেমের সাথে পরকীয়া প্রেম ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে আসমাকে তার স্বামী শাহানুর তালাক দেয়। শাহানুরের বাড়ি শহরের পুরাতন কসবায়। স্বামী শাহানুরের সাথে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে আবুল কাশেম আসমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি কাশেম ভারতে নিয়ে আসমাকে হত্যা করে। আবুল কাশেমকে আটকের পর রোববার ৩১ মে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরাম হোসেনের আদালতে হাজির করলে আবুল কাশেম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবান বন্দিতে আসমা হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ননা দেন। এর আগে ৩০ মে শনিবার রাতে আটকের পর আবুল কাশেম পুলিশের কাছেও আসমা হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ননা দেয়।

শনিবার (৩০ মে) গভীর রাতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার পল্লবী থানার বাউনিয়াবাদ বাজারের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে। এ সময় কাশেমের কাছ থেকে তার দুইটি মোবাইল ফোন, একটি পাসপোর্ট (বিপি-০২৯১৮৯১) ও আসমার একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। আবুল কাশেম ওরফে কাশেম মিয়া যশোর শহরতলী পালবাড়ী গাজীরঘাট রোডের মৃত বশির মিয়ার ছেলে।

জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ পরিদর্শক সোমেন দাস জানান, আবুল কাশেম ওরফে কাশেম মিয়া গত ১৫ জানুয়ারী সদর উপজেলার নওদাগ্রামের মঞ্জু স্যারের বাড়ির ভাড়াটিয়া স্বামী পরিত্যক্তা আসমা বেগম ওরফে আসমা ইসলামকে ভারতের বনঁগা শহরের শ্যামা প্রসাদ লজ নামক একটি আবাসিক হোটেলের ১নং কক্ষে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আবুল কাশেমের সাথে পরকীয়া প্রেম ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে আসমাকে তার স্বামী শাহানুর তালাক দেয়। স্বামী শাহানুরের সাথে সংসার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে আবুল কাশেম আসমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি কাশেম ভারতে নিয়ে আসমাকে হত্যা করে। আবুল কাশেমকে আটকের পর সে পুলিশের কাছে এ সব কথা স্বীকার করে। হত্যাকান্ডের পর আবুল কাশেম সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আসমা বেগমের সাবেক স্বামী শাহানুর ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল কাশেম মিয়া।
৩ সন্তানের জননী আসমা বেগমকে শাহানুর ইসলাম তালাক দিলে আবুল কাশেম আসমা বেগমের কাছে আসা যাওয়া করতো। আসমা বেগমের সাথে ড্রাইভার আবুল কাশেমের পরকীয়া প্রেম ও অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। সে কারনে কাশেম ড্রাইভার আসমাকে নিয়ে মাঝে মধ্যে ভারতে বেড়াতে যেতো। আসমা বেগমের খালা মনোয়ারা বেগম চিকিৎসার জন্য আসমাকে বললে আবুল কাশেম আসমা বেগমের সাথে মনোয়ারা বেগমকে ভারতে নিয়ে যায়। তারা বনঁগা শহরের শ্যাম প্রসাদ লজ নামক আবাসিক হোটেলে ওঠে। সেখানে ১নং কক্ষে আবুল কাশেম ও ৬ নং কক্ষে মনোয়ারা বেগম ও আসমা বেগম থাকে। ১৫ জানুয়ারী সকাল ১০টায় যশোর থেকে রওনা হয়ে ভারতের বনঁগায় পৌছে। সেখানে অবস্থানকালে পরের দিন ১৬ জানুয়ারী দুপুরে আবুল কাশেম তার কক্ষ থেকে দ্রুত চলে যায়। মনোয়ারা বেগমের সন্দেহ হলে হোটেলের কর্মচারীকে ওই কক্ষের তালা খুলে দেখতে বললে তিনি যেয়ে দেখেন ঘরের মধ্যে আসমা বেগম গলায় কাপড় পেচানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ পুলিশ লাশ উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়। এঘটনায় বনগাঁ থানায় মামলা হয়্ মামলা নং-৩৩। তারিখ: ১৬.০১.২০। ধারা: ৩০২ পেনাল কোড। ১৬ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত শেষে আসমা বেগমের তার স্বজনরা দেশে আনেন। আসমা বেগমের ভাই সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের মৃত আজগর আলীর ছেলে আজিম উদ্দিনের সন্দেহ হয় আসমার ড্রাইভার কাশেম আলী ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে। এ সন্দেহে তিনি ৩০ জানুয়ারি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাশেমের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে কোতয়ালি পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত করে। যার নম্বর-০৯। তারিখ: ০৫.০২.২০। ধারা: ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড। ১৪ মে মামলাটি ডিবিতে যাওয়ার পর থেকে আবুল কাশেমকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপর হয়। এক পর্যায়ে ৩০ মে রাতে আবুল কাশেমকে গ্রেফতার করে।

রোববার ৩১ মে আদালতে সোপর্দ করলে কাশেম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ননা দেয় বলে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক সোমেন দাস।