মাছ ধরতে গিয়ে বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়ে সুন্দরবনের খালে আশ্রয় নেয়া জেলেদের ট্রলারে লুটপাট ও মারধরের অভিযোগ উঠেছে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বনরক্ষীরা চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে আশ্রিত জেলেদের গহীন বনে ছেড়ে দিয়েছে। জেলেরা টানা তিন দিন বনের মধ্যে পায়ে হেটে জীবন নিয়ে লোকালয়ে ফিরেছেন।
নির্যাতিত জেলেরা মঙ্গলবার (৯ জুন) দুপুরে মোংলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বনরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে জেলে মোঃ আব্দুর রশিদ বলেন, ৭ মে বনবিভাগের দুবলা ফরেষ্ট ষ্টেশন থেকে বৈধ পাস পারমিট (অনুমতি) নিয়ে দুইটি ট্রলার যোগে জুয়েল, তায়িবসহ আমরা ১৩ জেলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাই। ১৪ তারিখে সমুদ্র উত্তাল হয়ে যায়। দিক ভুল করে আমরা সাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের বেহালা কয়লা খালে আশ্রয় নেই। সন্ধ্যায় পশ্চিম সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী ফরেষ্ট ষ্টেশনের কর্মকর্তা মোঃ আখতারুজ্জামান, বনরক্ষী রাসেল, কাওছার, আমজাদ ও বনবিভাগের বোট চালক আসাদসহ কয়েকজন ট্রলারে উঠে আমাদের মারধর শুরু করে। ফাঁকা গুলি ছুড়ে আমাদের ভয় ভীতি দেখায়। ট্রলারে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ১৫ মণ মাছ, জাল, জ্বালানী তেল ও নগদ ৪২ হাজার নগদ টাকা লুটে নেয়। আরও দুই লক্ষ টাকা দাবি করে আমাদের কাছে। টাকা না দিতে পারায় আমাদের কাছে থাকা বনবিভাগের বৈধ পাস পারমিটের কাগজ কেড়ে নেয়। পরে বনের গহীনে ছেড়ে দেয়। আমাদের ট্রলার আটকে রাখে তারা। বনের মধ্যে তিনদিন হাটার পরে একটি কাকড়ার নৌকায় হিরোন পয়েন্ট পৌছাই। পরে সেখান থেকে একটি ট্রলারে করে জীবন নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসি। পরে সুন্দরবন বনবিভাগের সাতক্ষিরা রেঞ্জর বুড়িগোয়ালিনি ক্যাম্পে ট্রলার ফেরত পাওয়ার জন্য যাই। সেখানে থাকা কর্মকর্তারা আমাদের কাছে দুটি ট্রলারের জন্য এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কিভাবে টাকা দিব। তাই উপায়ান্তু না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। লুটে নেওয়া মাছ, টাকা ও তেলের ক্ষতিপূরন চাই। মারধরের বিচার সহ ট্রলার ফেরত চাই। ট্রলার ফিরে না পেলে বেকার হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোন উপায় থ্কাবে না আমাদের।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী ফরেষ্ট ষ্টেশনের কর্মকর্তা মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, দুটি ট্রলারে বেশ কয়েকজন জেলে অভায়রন্যে ঢুকে পরে। তাদের বেপরোয়া চলাচলে বনরক্ষিরা গুলি ছোড়ে। তখন তারা বনের গহীনে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা তাদের ট্রলার আটকে অজ্ঞাত আসামী দিয়ে মামলা দায়ের করেছি।
পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ বশিরুল-আল-মামুন বলেন, ১৪ তারিখে কয়েকজন জেলেকে আটকের জন্য ধাওয়া করার বিষয়টি ষ্টেশন কর্মকর্তা আমাকে আগেই জানিয়েছিল। আইনি প্রক্রিয়ায় তার করা মামলা চলবে। সংবাদ সম্মেলনে জেলেরা যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়ে খতিয়ে দেখার কথাও জানান তিনি।