ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বিদেশী ফল ড্রাগন চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। উপজেলার অনেক চাষী এই ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। এবার ভাল জাত চিনে ড্রাগন চাষ করে সফল হয়েছেন শেখ রাসেল আহম্মেদ নামের এক যুবক।
রাসেল উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত শেখ আবুল কাশেমের ছেলে। যিনি বাড়ির আঙ্গিনায় ড্রাগান চাষ শুরু করে বর্তমানে মাঠে ২ বিঘা জমিতে এ ফলের চাষ করে প্রথম বছরেই আশানুরুপ ফলন পেয়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৬০ জন কৃষক ১৫০ বিঘা জমিতে ড্রাগনের আবাদ করছেন। যারা ড্রাগনের চাষ করছেন কৃষি বিভাগ তাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন।
রাসেল আহমেদ জানান, তার বাড়ির আঙ্গিকার আশপাশে ১৬ শতক জমিতে মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ছিল। ১৫ বছর আগে লাগানো এসব গাছ মাত্র এক লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। গাছ গুলি কাটার সময় তার মা তাকে বাধা দেন। সে সময় রাসেল তার মাকে বলেন, ১৫ বছর আগে লাগানো সব গাছ বিক্রি করে দাম পাওয়া গেছে ১ লাখ টাকা। আর আপনি আমাকে দোয়া করলে আমি প্রতি বছর আপনাকে ড্রাগন থেকে এক লাখ টাকা লাভ দিব। এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর গাছগুলি কাটা হয়। ২০১৯ সালে সেই বাড়ির আঙ্গিনার ১৬ শতক জমিতে প্রথমে ড্রাগন চাষ শুরু করেন রাসেল। একই সময়ে মাঠে আরো এক বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করে। এবার বাড়ির আঙ্গিনাসহ মাঠের গাছে প্রচুর ড্রাগন ফল ধরেছে।
তিনি আরো জানান, ড্রাগন চাষ করতে হলে প্রধানত তিন বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সমস্যা, সমাধান এবং সম্ভাবনা। এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে নতুন উদ্যোক্তারা কৃষিতে প্রবেশ করলে তারা লাভবান হবেন। তার এক বিঘা জমিতে ২২০ টি পিলার আছে। প্রতিটি পিলারের মূল্য পড়েছে ২২০ টাকা। প্রতিটি পিলারে গোড়ায় ৪টি করে ড্রাগনের চারা রোপন করা হয়েছে। অর্থাৎ এক বিঘায় ৮৮০টি চাষা রোপন করেছেন। তিনি পিলার গুলি বাইরে থেকে না কিনে নিজেই তৈরি করেছেন। এতে পিলার মজবুদ হয়েছে। পিলার, টায়ার, চারা, সার, কীটনাশক, সেচ পরিচর্যা বাবদ এক বিঘা জমিতে তার প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কেজিতে ৮ থেকে ১০টি যে ফল পাওয়া যায় সে ফলের মার্কেট ভেল্যু কম। আর কেজিতে ৩ থেকে ৪ টি যে ফল পাওয়া যায় সেটার মার্কেট ভাল। সুতরাং চারা লাগানোর সময় অবশ্যই কেজিতে সর্বোচ্চ ৪টি ফল হয় সে জাতের ড্রাগনের চারা লাগাতে হবে। এতে ফলের দাম ভাল পাওয়া যায়।
রাসেল আরো বলেন, লাভজনক চাষের মধ্যে ড্রাগন উন্নতম। তবে লাভ করতে চাইলে ভাল দাম দিয়ে চারা কিনতে হবে। ড্রাগন চাষে প্রথম বছরটায় বেশি খরচ হয়। এরপর থেকে আর তেমন কোন খরচ নেই। আর একবার ড্রাগন গাছ হলে একটানা ২০ থেকে ২৫ বছর ফল পাওয়া যায়। তিনি ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় এক লাখ টাকার ফল বাজারতাজ করার প্রক্রিয়া চলছে। আগে পাইকারী এক কেজি ড্রাগন ফল ৪ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু করোনার সময় বাজারদর ভাল পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ২ থেকে আড়াইশত টাকা কেজি দরে ড্রাগন পাইকারী হারে বিক্রি হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, রাসেলের ড্রাগনের বাগান সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন। যারা ড্রাগনের চাষ করছেন কৃষি বিভাগ তাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন ও ফল বিক্রির জন্য মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, ড্রাগন লাভজনক ফসলে পরিনত হওয়ায় দিন দিন এর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।