‘বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে বখাটেরা’

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে টাকা দাবি করে বখাটেরা। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রোববার রাতে প্রধান আসামি বাদল ও দেলোয়ারকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানায় র‌্যাব-১১।

সোমবার বেলা ২টায় র‌্যাব ১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসামিরা ঘটনা ঘটানোর কয়েক দিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে নির্যাতিতার কাছে টাকা দাবি করেন।

তিনি বলেন, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে যে, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ও আর্থিক সুবিধা নেয়ার উদ্দেশ্যেই তারা এ ঘটনাটি ঘটায়। পরে যখন কোনো কিছুই হচ্ছিল না, সে সময় তারা এই ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এ ঘটনায় আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। ভবিষ্যতে যারা এ ধরনের অপকর্ম করতে চান। তাদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছি– তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।

আসামিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে চাইলে খন্দকার সাইফুল আলম বলেন, অন্যায়কারীদের কোনো দল নেই। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা তা জানার প্রয়োজনবোধ করছি না। তার পরও তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারলে আমরা জানাব।

র‌্যাব জানায়, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এ ছাড়া দেলোয়ার বাহিনী বেগমগঞ্জে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও নানান রকম সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। এমনকি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাও রয়েছে।

আসামিদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

নির্যাতনের ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে দুটি মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী।

প্রসঙ্গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এর পর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেটি ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনকারীরা ওই গৃহবধূর পোশাক কেড়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু একটা বলতে থাকেন। তিনি প্রাণপণ নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেন এবং হামলাকারীদের ‘বাবা’ ডাকেন, তাদের পায়ে ধরেন। কিন্তু তারা ভিডিও ধারণ বন্ধ করেননি। বরং হামলাকারীরা তার মুখে ও শরীরে লাথি মারেন। এর পর তার শরীরে একটা লাঠি দিয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকেন। এ সময় ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার উল্লাস প্রকাশ করে ‘ফেসবুক’ ‘ফেসবুক’ বলে চিৎকার করে আরেকজন।

এদিকে এ ঘটনার পর অভিযুক্ত স্থানীয় দেলোয়ার, বাদল, কালাম ও তাদের সহযোগীরা নির্যাতিত গৃহবধূর পরিবারকে কিছু দিন অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে তারা পুরো পরিবারকে বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। এ কারণে ঘটনাটি স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ প্রশাসনের অগোচরে থাকে।

তবে ওই ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ ঘটনার ৩২ দিন পর রোববার গৃহবধূকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ওই নারী রোববার রাতে মামলা করেন। বেগমগঞ্জের ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী জানান, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে।

মামলার এজাহারের নারী উল্লেখ করেন, তার স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণা করেন। গত এক মাস ধরে তারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা এই ভিডিও ছেড়ে দেন।