গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা চায় বিএনপি

mirza fokrul
ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানিয়েছেন।

ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ। এজন্য সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তা হলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এ অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। দীর্ঘদিনের সমস্যাকে কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে না পারা নিঃসন্দেহে সরকারের চরম ব্যর্থতা। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি যে, গত ৩ ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে থেকে এক হাজার ৬৪২ জনের একটি দলকে কক্সবাজার থেকে নতুন প্রতিষ্ঠিত ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে আপত্তি জানিয়ে আসছিল।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার এ সংকট নিরসনে সমান দায়িত্ব রয়েছে। সবার সাথে সমন্বয় না করে সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার একটি নতুন সংযোজন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভাসানচর প্রকল্পটি মূলত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর একটি বর্ধিত প্রকল্প। এ প্রকল্পটি বর্তমানে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরে অন্যান্য প্রজেক্টের মতো প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে তা তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ রয়েছে। হতাশার কথা হলো, এ প্রকল্প তথা সরকারের সুদূরপ্রসারী দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে কিছু দলকানা সাংবাদিক দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোই যেন সংকট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন। ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরে সরকারের পক্ষে সাফাই না গেয়ে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে তাদের সরব অবস্থান ব্যক্ত করলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ত্বরান্বিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।’