কৃষকনেতা শেখ মাহমুদুল হক মণিপীরের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কৃষকের নয়নমণি, কৃষক আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ শেখ মাহমুদুল হক মণিপীরের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্য কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে সকাল ৯টায় প্রয়াতের সমাধীতে পুষ্পমাল্য অর্পন ও সকাল ১০টায় এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় কেন্দ্রীয় ও জেলাসহ স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন। কর্মসূচী সফল করার জন্য সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের যথা সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য বিশেষ ভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।

শেখ মাহমুদুল হক মণিপীর ছিলেন সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা-দালালপুঁজি বিরোধী রাজনৈতিক চেতনায় এক অগ্রসেনানী। সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এবং উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল মুক্ত করার সংগ্রামে। তিনি জানতেন আমাদের মত দেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় কৃষক ও কৃষির সমস্যাই মূলত জাতীয় সমস্যা। তাই তিনি কৃষকের মাঝে থেকেই এই লড়াইকে এগিয়ে নিতে ব্রতী হন। তিনি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের মাহাতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা গ্রহণ করলেও বৃহত্তর যশোরসহ সারা দেশের পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ময়দানে, কলে-কারখানার নির্যাতিত, নিস্পেষিত মানুষের পাশে থেকে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। ১৯৭৭ সালে কৃষকদের বিশেষ করে আখচাষীদের দাবি আদায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিক-কৃষকসহ সর্বস্তরের জনগণ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহায়তায় গড়ে তোলেন বিশাল এক কৃষক আন্দোলন। যে আন্দোলনের মাঝ দিয়ে আখচাষীদের ৪২ দফা আন্দোলন বিজয় অর্জন করে এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এভাবেই তিনি তার অঞ্চলের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের বিশ্বস্ত বান্ধবে পরিণত হন।

মণিপীর সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের কাছে আস্থাভাজন ও লড়াকু নেতা হিসাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিলেন। এ কারণেই তিনি সরকার ও শোষকগোষ্ঠীর রোষাণলে পড়েন। ১৯৭৯ সালে মণিপীরের নির্বাচনী জনসভা বানচালের উদ্দেশ্যে একই দিনে একই সময়ে কালীগঞ্জে তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান তার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করে। ওই জনসভায় সরকারী ক্ষমতার নানা চাপ সৃষ্টি করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে সাধারণ জনগণকে উপস্থিত করে। কিন্তু যখন মনিপীর তাঁর জনসভায় ভাষণ শুরু করেন সকল ক্ষমতার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সেই হাজার হাজার কৃষক-জনতা জিয়াউর রহমানের জনসভা ত্যাগ করে তাদের প্রিয় নেতার জনসভায় এসে সমবেত হন। আজও কালীগঞ্জবাসীর স্মৃতিতে সেই ইতিহাস উজ্জ্বল হয়ে আছে। ১১ ডিসেম্বর ১৯৭৯ মটরসাইকেলযোগে সাংগঠনিক কাজে যাওয়ার পথে সামরিক বাহিনীর জিপের ধাক্কায় রহস্যজনক এক সড়ক দুর্ঘটনায় সংজ্ঞা হারান। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মণিপীর উপলব্ধি করেছিলেন শ্রমিক-কৃষক তথা জনগণের প্রকৃত মুক্তি সংগ্রাম সফল করতে হলে প্রয়োজন এক শক্তিশালী কৃষক সংগঠনের। সেই উদ্দেশ্যে কৃষক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে তুলে ধরেছিলেন। প্রয়াত এই নেতার চেহলামের দিনে কালিগঞ্জের ভূষণ হাই স্কুল মাঠে লক্ষাধিক কৃষকের উপস্থিতিতে ২৪ জানুয়ারী ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংগ্রামী এই নেতার কৃষক সংগঠন গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়।