রাষ্ট্রপতিকে দেয়া ৪২ বিশিষ্ট নাগরিকের চিঠি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: ইসি শাহাদাত

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ‘গুরুতর অসদাচরণ, আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগ তুলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতিকে যে চিঠি দিয়েছিলেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক, সেই চিঠিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

ইসি শাহাদাত বলেন, এটা হয়তোবা কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলোর কোনোটার ভিত্তি আছে বলে আমি মনে করি না। এরকম একটা বিষয় উপস্থাপন করা সুধীজনের জন্য বিবেচনা প্রসূত নয়।

রোববার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসি শাহাদাত হোসেন বলেন, বিশিষ্টজনদের বক্তব্যের বিষয়ে তেমন কিছু বলার নেই। তারা যেসব অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করেছেন, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতি কী করবেন, সেটা তার ব্যাপার। তবে বিশিষ্টজনদের বক্তব্য শিষ্টাচারবহির্ভূত হয়েছে কিনা, তা মানুষ দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, বর্তমান কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যতটুকু করণীয়, তার সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করছে।

আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ তুলে ইসির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে গত ১৪ ডিসেম্বর ওই চিঠি দেন ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলার জন্য রাষ্ট্ররপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে অনুরোধও জানিয়েছেন তারা। পরে গত শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তদন্তে তারা দোষী হবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাদেরকে অপসারণ করবেন- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার। এতে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া আবেদন উল্লে­খ করে নির্বাচন কমিশনের ‘গুরুতর অসদাচরণ ও আর্থিক দুর্নীতি’র কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়। তাদের অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- নির্বাচন কমিশনারদের বিশেষ বক্তা হিসেবে ২ কোটি টাকার বেশি গ্রহণ, কর্মচারী নিয়োগের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার দুর্নীতি, নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি করে গাড়ি ব্যবহার এবং ইভিএম কেনায় অনিয়ম। এ ছাড়া অসদচারণের মধ্যে রয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম। চিঠিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের আবেদন জানিয়েছেন তারা।

দেশের ৪২ জন নাগরিকের পক্ষে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন- ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অবসরপাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ও মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমরা সবাই মনে করেছি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর নির্বাচন কমিশন যেসব কার্যকলাপ করেছে সেগুলো গুরুতর অসদাচরণ। সাংবিধানিক পদে যারা আছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করার ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের। দুদক বা পুলিশ এটা করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি এ নির্দেশ দিতে পারেন। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি- গুরুতর অসদাচরণের দায়ে তারা দোষী প্রমাণিত হবেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের পদ থেকে অপসারণ করবেন।

অভিযোগে স্বাক্ষরকারী বাকিরা হলেন- অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভিসি পারভীন হাসান, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আহমেদ কামাল, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর।

আরও রয়েছেন- সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, স্থপতি মোবাশ্বের হাসান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সি আর আবরার, আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, লুবনা মরিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, গোলাম মোর্তুজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক নায়লা জামান খান, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন।