এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান ম্যাক্রোঁ

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, মতের অমিল থাকা সত্ত্বেও তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, ন্যাটো জোটভুক্ত দুই দেশের প্রেসিডেন্ট আগামী সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে আলোচনায় বসছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ফ্রান্সের সংবাদপত্র ‘লে মন্ডে’ ম্যাক্রোঁর কাছে জানতে চান। এসময় ম্যক্রোঁ বলেন, আমরা জানি আমাদের মধ্যে মতের ব্যাপক অমিল। অনেকসময় আমরা বিতর্কে জড়িয়েছি এবং মেনে নিয়েছি। কিন্তু এটা কোনো বিষয় না, আমাদের সর্বদা আলোচনায় বসা প্রয়োজন।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিতব্য জি-সেভেন সামিট এবং ন্যাটোর মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকের পূর্বে আগামী সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ম্যাক্রোঁ বলেন, আমরা উভয়ই আলোচনায় বসতে চেয়েছি। আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং সংলাপের প্রয়োজন রয়েছে ।

আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, আগামী সোমবার আলোচনায় ম্যাক্রোঁ ও এরদোগান আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন। এর মধ্যে সিরিয়া, লিবিয়া, এবং নাগোর্নো কারবাখের সংঘর্ষ উল্লেখযোগ্য।

তুরস্ক এবং ফ্রান্স উভয়ই সামরিক জোট ‘ন্যাটো’র সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই দেশের নেতা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছেন। সিরিয়ার যুদ্ধ, পূর্ব ভূমধ্যসাগর এবং লিবিয়ায় এই দুই দেশে একে অন্যের বিপরীত অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া তুরস্কের রাশিয়ার থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে যেটা ন্যাটোর বাকি সদস্যরা বিরোধীতা করছে।

গত ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ধর্ম হিসেবে ইসলাম আজ বিশ্বজুড়ে সংকটে রয়েছে। শুধুমাত্র যে আমাদের দেশেই যে এই ধরনের ঘটনা চোখে পড়ছে তা কিন্তু নয়। তবে আমরা কোনোভাবেই ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিতে কাউকে আঘাত হানতে দেব না। নতুন করে অভিযান চালিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক সেক্টর থেকে ধর্মকে সরিয়ে দেওয়া হবে। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য যেসব স্কুল ও মসজিদ বিদেশে থেকে টাকা পায় তাদের ওপর কড়া নজরদারি চলবে। তার ওই বক্তব্যের পর মুসলিম বিশ্বের ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

এরদোগান বলেন, ‘ইসলাম সংকটে বলে ম্যাক্রোঁ যে শুধু ধর্মকে অশ্রদ্ধা করেছেন তাই নয়, খোলাখুলি উসকানিও দিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ এসব কথা বলে তার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। ইসলামের কাঠামো নিয়ে কথা বলার তিনি কে?’

এরদোগান বলেন, ম্যাক্রোঁ যে সব বিষয়ে কিছুই জানেন না, সেই সব বিষয়ে বলার আগে যেন ভালো করে বিষয়টা জেনে নেন। আমরা চাই তিনি দায়িত্বশীল প্রেসিডেন্টের মতো কাজ করুন। ঔপনিবেশিক গভর্নরের মতো নয়।’

ম্যাক্রোঁ ও এরদোগানের সম্পর্ক এমনিতেই খুব ভালো নয়। যেখানেই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেখানেই ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন।

গ্রিসের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের বিরোধে গ্রিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ম্যাক্রোঁ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যাতে তুরস্কের ওপর অবরোধ দেয় তার জন্য আবার আর্মেনিয়া-আজারবাইজান লড়াইয়ে যেখানে আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক সেখানে আর্মেনিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট।