শিশু সৃজনের দেব-দেবীর ছোট্ট প্রতিমা তৈরিতে ব্যাপক সাড়া

সৃজন অধিকারী। বয়স সবেমাত্র নয়। এ সময়ে পুরোদোস্তর বয়স্ক ভাস্করের মত করেই তৈরি করেছে দুর্গা পূজার দুর্গা দেবীসহ অসুর গণেশ সকলের ভাস্কর্য। তৈরি করছে দুর্গা দেবী কালীসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা। আর এসব প্রতিমার পুরোটাই খুবই ছোট। সেখানে দেব-দেবীর ছোট প্রতিমায় মুখমন্ডল অত্যন্ত সুন্দর।

খুলনা জেলার বিলডাকাতিয়া পাড়ের একটি গ্রাম রংপুর কালীতলা। ওই গ্রামের জোড়া বটতলা নামক স্থানে বসবাস শঙ্কর অধিকারীর। তার শিশু পুত্র ওই গ্রামের ঘরামি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী সৃজন অধকারি।

সৃজন মাত্র ৫ বছর বয়সের সময়ে মায়ের অসুস্থ্যতার সময়ে ঘরের দেয়ালে মাটি দিয়ে একটি প্রতিমা তৈরি করে মায়ের সুস্থ্যতার জন্য পূজা করে। সেই থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিমা তৈরি করতে থাকে সৃজন। এক সময়ে পড়ালেখা বাদ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করায় তার বাবা-মা সৃজনকে বকাবকি করত।

কিন্তু গত দেড় বছর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সৃজনের এ প্রতিমা তৈরিতে আর বাধা দেন না। তারাই এখন সৃজনকে প্রতিমা তৈরি উপকরন জোগাড় করে দেন। সৃজনের ছোট্ট প্রতিমা তৈরি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন দেখতে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ডিসিপ্লিনের স্নাকোত্তর পাস করা লাইমুন নাহার সীমা এসছিলেন সৃজনের ছোট্ট প্রতিমার ভাস্কর্য দেখতে। তিনি বললেন, অসাধারণ শিল্প কর্ম। যেকোন পুরোদস্তুর ও পেশাদার ভাস্কর্যের মতই দুর্গা, অসুর, গণেশ কার্তিক, স্বরসতী অর্থাৎ দুর্গাপূজার সকল প্রতিমাগুলোই শিশুটি তৈরি করেছে।

পৃষ্ঠপোষকতা পেলেই সৃজন একজন নামকরা ভাস্কর হিসেবে প্রশংসা কুড়াবে। প্রতিমা তৈরি প্রসঙ্গে ছোট্ট শিশু সৃজন জানাল, আমার মা কয়েক বছর আগে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আমি শুনেছি ঠাকুরের কাছে চাইলে সব দেন। তাই আমি তো ছোট ছিলাম আমাকে মন্দিরে ঠাকুরের সামনে যেতে দেবে না।

তাই ঘরের বারান্দার একটি পিলারে কালি মায়ের প্রতিমা তৈরি করে একটি আপেল রেখে মায়ের জন্য ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি। তার পর থেকে আমি প্রতিমা তৈরি করি। শুরুতে বাবা-মা বকাবকি করলেও এখন আর বকাবকি করে না।

সৃজনের বাবা শঙ্কর অধিকারি জানালেন, সৃজনের মা এক সময়ে ব্র্যাক এনজিওতে চাকরী করত। অসুস্থ্যতার কারণে সে চাকরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তার চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হযে যায়। কোন অবস্থাতেই আরোগ্য হচ্ছিল না। সৃজন তখন মাত্র চার বছরের শিশু।

সে ঘরের বারান্দায় কালি ঠাকুরের একটি প্রতিমা তৈরি করে প্রার্থনা করে মায়ের জন্য। প্রতিমাটি খুব ভাল হয়। এরপর থেকে সে প্রতিমা তৈরি করে। শুরুতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এই নিয়ে পড়ে থাকে। করোনার সময়ে যেহেতু স্কুল বন্ধ ছিল তাই সে সময়ে আর কিছু বলিনা। সৃজনের তৈরি অনেক প্রতিমা খ কওে নিয়ে যায়।