পরমাণু শক্তির দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছি

hasina
ফাইল ছবি

পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরমাণু শক্তির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আজকে জায়গা করে নিতে পেরেছে।

রোববার (১০ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাবনার রূপপুরে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র স্থাপন কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমরা এখন পরমাণু শক্তির একটা অংশ হিসেবে, আমি বলবো সেখানে একটা স্থান আমরা করে নিতে পারলাম এবং সেটা শান্তির জন্য। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পরমাণু শক্তি আমরা শান্তির জন্য ব্যবহার করছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশের জন্য আজকে এটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ দিবস। আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আমার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনটি সত্যিই আমাদের জন্য খুবই একটা আনন্দের দিন।

করোনার কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় নিজের মনোবেদনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে সশরীরে দেখতে যাবো।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা প্রায় তিন থেকে চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি।

অর্থাৎ রি-অ্যাক্টরের কাছে বা একেবারে ভেতরে যারা কাজ করবে তাদেরও অভিজ্ঞতা দরকার, প্রশিক্ষণ দরকার, তার বাইরে আরেক স্তরে যারা আছে তাদের দরকার। তার পাশাপাশি পুরো এলাকার নিরাপত্তার ব্যবস্থাটাও আমরা নিয়ে নিয়েছি।

তিনি বলেন, সেখানে আমরাদের সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছি, পুলিশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছি। এভাবে আমরা বিভিন্ন স্তরভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।

২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে আমারও কতগুলো প্রশ্ন ছিল, আমরা এটা করার পর এটার নিরাপত্তা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। কারণ বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ, এখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করাটা সম্ভব নয়।

আমাদের যে চুক্তি হয় তাতে এটাও নিশ্চিত করা হয়, এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবসময় রাশিয়া নিজেই করবে। সেই বিষয়গুলো আমরা নিশ্চিত করি।

পরিবেশ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অ্যাটমিক নিউক্লিয়ার পাওয়ারে কখনো পরিবেশ দূষণ হয় না, এখন সবখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। কাজেই সেখানে কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটার খুব একটা সুযোগ থাকে না।

বাংলাদেশে অনেকে না জেনে সমালোচনা করেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাংলাদেশে একটা কিছু করতে গেলে এত সমালোচনা, নানাভাবে নানাজনে, কেউ বুঝে না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলেন, অনেক কথা লিখে ফেলেন। টকশোতে অনেক কথা, এটা হচ্ছে বাংলাদেশের নিয়ম।

পরমাণুকেন্দ্র স্থাপনের ফলে এ বিষয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের দেশে যারা বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী বা যারা নিউক্লিয়ার বিষয়ে যারা কাজ করেন সবারই কিন্তু একটা অভিজ্ঞতা হলো। কারণ তাদের ট্রেনিং করাতে হচ্ছে। তাদের রাশিয়া-ইন্ডিয়াতে ট্রেনিং করাচ্ছি।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুফলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনে করি যে, এই বিদ্যুৎটা যখন পৌঁছে যাবে ঘরে ঘরে… ইতিমধ্যে আমরা কিন্তু সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজও শুরু করে দিয়েছি। কাজেই আমরা ২০২৩ সালের মধ্যে আশা করি এই বিদ্যুৎ ২০২৪ সালে আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট শুরু হয়ে যাবে। কাজেই এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে, সেটাই আমরা বিশ্বাস করি।

আইএইএর সঙ্গে চুক্তি সই, বাংলাদেশ অ্যাটমিক অ্যানার্জি কমিশন গঠনসহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাও অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর এই উদ্যোগটাই থেমে যায়। যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন তাহলে এটা আমরা আরও অনেক আগে করতে পারতাম।

বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই উদ্যোগ থেমে যাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে আমরা উদ্যোগ নেই। যার ফলে আজকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পাওয়ার প্ল্যান্টটা হয়ে যাওয়ার পর আমরা দক্ষিণাঞ্চলে জায়গা খুঁজছি। যদিও দক্ষিণাঞ্চলে শক্ত মাটিওয়ালা জায়গা পাওয়া খুবই কঠিন। বিভিন্ন দিক এবং বিভিন্ন জায়গা আমরা সার্ভে করছি যে, আরেকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট আমরা করবো। কোথায় ভালো জায়গা পাই এবং আমরা সেটা করতে পারবো। আমার ইচ্ছা পদ্মার ওপারেই করার। অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চলে করার। আমরা জায়গা খুঁজছি এবং আশা করি, এ ব্যাপারে খুব একটা অসুবিধা হবে না।

তিনি বলেন, যদি আরেকটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আমরা করতে পারি তাহলে বিদ্যুতের জন্য আমাদের আর অসুবিধা হবে না। তারপরেও আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছি এই জন্য যে, এই বিদ্যুৎ সুবিধাটা যাতে মানুষ পায় এবং এটা যাতে অব্যাহত থাকে।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপণ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে রাশিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে দেশটির সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।