লকডাউনের প্রতিবাদে ইউরোপের দেশে দেশে বিক্ষোভ

ইউরোপে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া ঠেকাতে নতুন করে লকডাউন আইন ঘোষণার পর নেদারল্যান্ডসে আবার বিক্ষোভ ছড়িয়েছে।

দ্য হেগ শহরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে জ্বলন্ত আতসবাজি ও পটকা ছুঁড়েছে এবং সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এর আগে, শুক্রবার রাতে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডামে করোনাভাইরাস বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে শত শত মানুষের বিক্ষোভ ভয়াবহ দাঙ্গায় রূপ নিলে পুলিশ গুলি চালায়।

অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং ইতালিতে নতুন বিধিনিষেধ জারির ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী পথে নামে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ইউরোপে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে তারা ‘অত্যন্ত উদ্বিগ্ন’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সংস্থার ইউরোপ অঞ্চল প্রধান হান্স ক্লুগ বলেছেন, ইউরোপ জুড়ে যদি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে আগামী মার্চ নাগাদ ইউরোপে মৃত্যুর সংখ্যা আরও পাঁচ লাখ বেড়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ইউরোপে আবারও মানুষের মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হয়ে উঠেছে কোভিড-১৯।

এই ভাইরাসের মোকাবিলা করতে ‘কী করা দরকার সেটা আমরা জানি’ যেমন ভ্যাকসিন নেয়া, মাস্ক পরা, এবং কোভিড পাস ব্যবহার করা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন বিধিনিষেধ আনছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সম্প্রতি প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ।

নেদারল্যান্ডস

দেশটির বেশ কয়েকটি শহর ও শহরতলীতে গতকাল দ্বিতীয় রাতের মত দাঙ্গা হয়েছে। দ্য হেগ শহরে হুড দিয়ে মুখ ঢাকা দাঙ্গাকারীরা রাস্তায় সাইকেলে আগুন দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ঘোড়া, কুকুর ও লাঠি ব্যবহার করেছে। কর্মকর্তারা শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে এবং অন্তত সাত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, রোগী নিয়ে যাওয়া একটি অ্যাম্বুলেসের জানালা লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি পাথর ছুঁড়ে মেরেছে। শহরের পুলিশ কর্মকর্তারা টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, পাঁচজন পুলিশ আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের অন্যত্র দুটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ চলার সময় সমর্থকরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়লে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং কিছুক্ষণের জন্য ম্যাচ দুটি বন্ধ রাখতে হয়। নতুন করোনাভাইরাস নিয়মের আওতায় এখন ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে রটারডামে যে ব্যাপক দাঙ্গা হয়, শহরের মেয়র তাকে ‘সহিংসতার মহোৎসব’ বলে বর্ণনা করে তার নিন্দা করেন।

রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নেয় তাতে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল ফলে পুলিশকে প্রথমে হুঁশিয়ারিমূলক এবং পরে সরাসরি গুলি চালাতে হয়।

গুলিতে আহত অন্তত তিনজন বিক্ষোভকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। নেদারল্যান্ডসে কোভিড সংক্রমণ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছানোর পর গত শনিবার দেশটিতে তিন সপ্তাহের আংশিক লকডাউন জারি করা হয়,
যার আওতায় পানশালা এবং রেস্তোরাঁ রাত আটটায় বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দেয়া হয় এবং সবধরনের খেলাধুলার ইভেন্ট নিষিদ্ধ করা হয়।

অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়ায় সরকার নতুন করে জাতীয় পর্যায়ে লকডাউন এবং ২০২২ এর ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা ঘোষণার পর রাজধানী ভিয়েনায় হাজার হাজার মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে।

অস্ট্রিয়া ইউরোপের প্রথম দেশ যারা টিকা নেয়া বৈধ করতে যাচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা এবং ‘ফ্রিডম’ (স্বাধীনতা) লেখা ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদ! ধ্বনি তুলে স্লোগান দেয় এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে নিন্দা ধ্বনি করে।

অস্ট্রিয়ায় সোমবার (২২ নভেম্বর) থেকে সারা দেশে বিশ দিনব্যাপী লকডাউন শুরু হচ্ছে। এর ফলে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ রাখার এবং মানুষকে ঘর থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বাধ্যতামূলক টিকা নেয়ার বিধানকে ‘দুদিকেই কাটে এমন অস্ত্র’’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ইউরোপে রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশান ও কন্ট্রোল-এর পরিচালক ড. অ্যান্ড্রিয়া আম্মন।

তিনি বলেন, যেসব মানুষ এখনও টিকা নিয়ে সন্দিহান, কিন্তু টিকা নেয়ার বিষয়টা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেননি এবং যাদের টিকা নিতে রাজি করনোর সুযোগ এখনও আছে, এই পদক্ষেপ তাদের বৈরি করে তুলতে পারে এবং তারা টিকা নেয়া পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারেন।

ক্রোয়েশিয়া, ইতালি ও ফ্রান্স

ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবে সরকারি কর্মীদের জন্য টিকা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করতে মিছিল করেছেন হাজার হাজার মানুষ।

ইতালিতে কর্মস্থল, বিভিন্ন ভেন্যু এবং গণপরিবহনে ‘সবুজ পাস’ সনদ চালু করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রোমে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে।

ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ তাদের শাসনাধীন ক্যারিবীয় দ্বীপ গুয়াডেলুপ-এ টিকা নিয়ে অসন্তোষ মোকাবিলায় কয়েক ডজন পুলিশ অফিসার পাঠিয়েছে।

এদিকে, ফ্রান্সের নিজস্ব কোভিড ছাড়পত্র সনদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সহিংস হয়ে ওঠে যখন লুটপাটকারীরা বেশ কিছু দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তছনছ করে।

দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, লুটপাটে অংশ নেয়া কিছু ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলাকারীদের ওপর তাজা গুলি ব্যবহার করেছে, তবে তিনি বলেছেন, গণবিশৃঙ্খলা যারা সৃষ্টি করছে, তাদের রুখতে প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।