যশোরে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ এনে দুই তরুণ তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে
ক্ষোভ বিরাজ করছে। নির্যাতনের শিকার ঐ তরুণ তরুণী সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দা।
তারা একে অন্যের নিকট আত্মীয় বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা। আর অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
এদিকে, মেয়ে ও মেয়ের সাথে থাকা যুবকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগে ইউপি সদস্যসহ চার জনের নামে শুক্রবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পরে থানা পুলিশ বিষয়টি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেন। এ ঘটনায় ইউপি সদস্যসহ চার জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, একই গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে ইউপিট সদস্য আনিছুর রহমান (৩৫),
নাছেরের ছেলে ভুট্টু (২৭), আব্বাস আলীর ছেলে আজিম আলী (৪০) ও জাহাঙ্গীর হাসানের ছেলে তৌহিদ হাসান (২৭)।
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় আমার মেয়ে ও আত্মীয় এক যুবকের বাইসাইকেলে করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়।
পরে ফেরার পথে তাদের বাইসাইকেল গতিরোধ করে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে এনে দুইজনকেই অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার কর্মীবাহিনী আইয়ুব আলী, ভুট্ট, আব্দুল আলীমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন।
একপর্যায়ে তাদের দুইজনকে নিয়ে একটি দোকানের ভিতরে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে তারা। খবর পেয়ে তাদের দুই জনকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও ধাক্কা দিয়ে তারা চলে যায়।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদের দুইজনকে বিনাদোষে অমানবিক নির্যাতন করেছে। এই নির্যাতনকারীদের বিচার চাই। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়,
একটি দোকানে অর্ধশতাধিক দোকানের ভিতরে তরুণীকে এলোপাতাড়ি জুতা পিটা করছে ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও ইউপি সদস্যর পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথিও দেন।
অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগের তরুণীর সাথে থাকা যুবককেও এলাপাতাড়ি মারধর করছে ইউপি সদস্য ও তার সাথে থাকা কয়েকজন যুবক।
পরে আর একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কয়েক যুবক তরুণীর হাত ও পা ধরে রেখেছে। এর পরে ইউপি সদস্যদের সাথে থাকা আইয়ুব, ভুট্ট আর আব্দুল আলীমসহ তিন থেকে চার জন বিভিন্ন লাঠি দিয়ে তরুণীকে হাতে পায়ের গুড়ালিতে বেধড়ক মারপিট করতে।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ঐ যুবককেও একইভাবে লাঠি দিয়ে পেটান তারা। অনেকেই দুই তরুণ- তরুণীকে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার কথাও শুনা যায় ঐ ভিডিও দুটিতে।
চুড়ামণকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন, মেয়েটি চরিত্রহীনা। এর আগেও অনেকবার অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে মেয়েটির বিরুদ্ধে।
ভিডিওটি ভাইরাল হলে আমি মোবাইলে ইউপি সদস্যের সাথে কথা বলেছি সত্য ঘটনাটি জানার জন্য। মেয়ে ও ছেলেটি যদি অন্যায় করেও থাকে তাহলে এইভাবে নির্যাতন করা উচিত হয়নি।
ইউপি সদস্য আসলেই অন্যায় করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভুক্তভোগী মেয়ে ও ছেলের পরিবারের সদস্যদের ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলেছিলাম। এর সুষ্ট বিচার করে দেয়ার জন্য। তবে কেউ আসেনি।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর পিতা থানায় এসে ৪ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মারধরের ভিডিও দেখে ও অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত চার জনের গ্রেফতার করা হয়েছে।
