সরকারী নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে রূপদিয়ায় কোচিং বাণিজ্য তুঙ্গে!

রূপদিয়া ওয়েল ফেয়ার একাডেমীতে ভোর ৬টা থেকে বিদ্যালয়ের কক্ষে’ই এক্সটা ক্লাসের নামে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছে মারুফুল ইসলাম নয়ন সহ একাধিক শিক্ষক।

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রেণীকক্ষের আদলে কোচিং সেন্টারেই চলছে বিশেষ পাঠদান। এই প্রতিষ্ঠানের’ই এক শ্রেণির শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন অবলীলায়।

এটি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। যা পরিবারের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ’কে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এর দিকে বেশি সময় ব্যয় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সমস্যার মধ্য পড়তে হচ্ছে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকগণের।

চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা। এসব বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার নীতিমালা প্রণয়ন করে।

নীতিমালায় বলা হয়, কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো যেতে পারে। অথচ এসব নির্দেশনাকে বৃদ্ধাংঙ্গুলি দেখিয়ে ভোর থেকে কয়েকটি ব্যাচে চালিয়ে যাচ্ছে কোচিং ক্লাস।

যদিও সাংবাদিকদের বলছে কোচিং নয় এটা এক্সটা ক্লাস। সচেতন মহলের দাবী যদি এটা এক্সটা ক্লাসই হবে তবে কেন অফিস টাইমের পূর্বে। আর সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের একই সাথেই বা কেন? সরকারি বিদ্যালয়গুলো এর বাইরে নয়, নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে চলছে অতিরিক্ত আয়।

কোচিং এ আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থী জানায়, সামনে পরীক্ষার কারণে স্কুলে কোচিংয়ে কিছুটা সময় পরিবর্তন হয়েছে, তবে কোচিং বন্ধ হয়নি। বিদ্যালয়ের ক্লাসে তেমন লেখাপড়া না হওয়ার কারণে কোচিং করছেন তারা। আবার অনেকে বলছে বিদ্যালয়ে নির্ধারিত ক্লাসে বুঝে ওঠার আগেই ঘণ্টা বেজে যায়। শিক্ষকরা না বুঝানোর কারণে কোচিং এ এসে তারা সেই শিক্ষকের কাছেই পুনরায় বেশি করে তা বুঝে নেয়।

কোচিং করতে আসা একাধিক (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল চলাকালীন ক্লাসে স্যাররা মাত্র ৪০ মিনিট সময় ক্লাস করান। এত অল্পসময়ে ক্লাস হওয়ার কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কথা বা পড়া তেমন বুঝে উঠতে পারে না। নির্ধারিত ৪০ মিনিট সময় পার হতে না হতেই ঘণ্টা পড়ে যায় এবং পরবর্তী অন্য বিষয়ের ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু কোচিং ক্লাসে স্যারেরা আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত ক্লাস নেন এবং ভালোভাবে বুঝিয়ে দেন।

স্কুলের ক্লাসের তুলনায় কোচিংয়ে ভালো লেখাপড়া হয়। স্কুলে তেমন ভালো একটা লেখাপড়া হয় না। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা সময়ের অভাবে সেভাবে ক্লাস নিতে পারে না, তবে কোচিং এ অনেক সময় দেন শিক্ষকরা, স্কুলের শিক্ষক নয়ন স্যারের কাছে তারা কোচিং করেন।

যেখানে তাদের ক্লাসের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন নিয়মিত পড়ছে। কোচিং এর জন্য স্যাররা প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে মোটাংঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত নয়ন বলেন সাবজেক্ট প্রতি ২৫০ টা গ্রহণ করা হয়।

বিদ্যালয়ের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর দৃশ্য দেখা গেলেও এ বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। রূপদিয়া ওয়েল ফেয়ার একাডেমীর প্রধান শিক্ষক বলেন। তারা বিদ্যালয়ের ভিতরে অতিরিক্ত ক্লাস করাচ্ছন।

ক্লাসের শিক্ষার্থীর মধ্যে সকলেই পিছিয়ে পড়া, অতিরিক্ত ক্লাস করছে এ বিষয়ে শিক্ষকরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে কোচিং ব্যবসা চালাচ্ছেন বেশির ভাগ শিক্ষক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবিভাবক জানান, স্কুলগুলোতে লেখাপড়া তেমন হচ্ছে না, শিক্ষকরাও ঠিকমতো মনোযোগ সহকারে বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছেন না। শিক্ষকরা নিজেরাই ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিংমুখী করে তুলছেন। স্কুলের ক্লাস শিক্ষকের কাছে কোচিং না করালে পরীক্ষার ফলাফলে বাচ্চাদের নম্বর কম দেন।

অনেকটা বাধ্য হয়েই বেশির ভাগ অবিভাবক তাদের সন্তানদের কোচিং এ পড়াচ্ছেন। শিক্ষকদের আচরণ এখন আর প্রকৃত শিক্ষকদের মতো নেই। স্কুলে চাকরি করা বেশির ভাগ শিক্ষক এখন কোচিং ব্যবসা খুলে বসেছেন।

যেখানে সরকারি বেতন বাদ দিয়েও শিক্ষকরা প্রতিমাসে অতিরিক্ত অর্থ আয় করছেন। এ বিষয়ে কোনো অবিভাবক প্রতিবাদ করলে তাদের সন্তানদের ভিন্ন চোখে দেখেন শিক্ষকরা। তাই অবিলম্বে সরকারি স্কুলে কোচিং বন্ধ করা উচিত বলে অভিমত তাদের।