র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি ছাড়া র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।

আমরা এমন একটি র‌্যাব চাই, যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে যেমন কঠোর থাকবে, তেমনি মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে কঠোর থাকবে।

রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক: জোরদার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব স্থাপন’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি পদ্ধতি প্রত্যাশা করি, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কে দেশ চালাবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন।

বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত কাজি ইমতিয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্হাপন ও আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, গত ৫০ বছরে আমরা অনেক জটিলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তবে গত কয়েক বছরে আমরা বেশ ভালো কাজ করেছি। অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে। আমি বিদেশি নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি, তারা চাইলে আসতে পারেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

গত জাতীয় নির্বাচনে সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আসনে এর আগে রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারের পর্যবেক্ষণে যাওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, তারা কোনো অসংগতি পাননি। পর্যবেক্ষকদের নিয়ে আসায় এবং পর্যবেক্ষণে আপনাদের স্বাগত।

আমরা নির্বাচনি ব্যবস্থা উন্নত করতে চাই। আপনারা যদি কোনো দুর্বলতা ও ঘাটতি দেখেন, তাহলে আপনাদের পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাব। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হাস তার বক্তব্যে বলেন, ‘৫০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন মোড় নিচ্ছে।

আমরা আমাদের সংস্কৃতি, জনগণ ও আমাদের অর্থনীতিকে সম্পৃক্ত করে একসঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করেছি। এই সম্পর্ককে বাংলাদেশ যত দ্রুত প্রসারিত ও গভীর করতে চাইবে, যুক্তরাষ্ট্রও তত দ্রুত এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।

তবে ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ করলে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে পরিবর্তন আসবে। কারণটা সহজ—বদলে গেছে বাংলাদেশ।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সত্ভাবে বলতে চাই, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি ছাড়া র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই। আমরা এমন একটি র‌্যাব চাই, যারা সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কঠোর থাকবে, একই সঙ্গে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রাখবে।

কিন্তু র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মানে এই নয় যে, আমরা শক্তিশালী নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে পারব না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সহিংস চরমপম্হা প্রতিরোধে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাব।

তিনি বলেন, দুই দেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নিখুঁত নয়। আমরা আমাদের নিজেদের গণতান্ত্রিক নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এই যাত্রার মধ্যে রয়েছে পুলিশের জবাবদিহি বিষয়ে আমাদের নিজস্ব সমস্যা নিরসন

এবং নির্বাচনের দিনে সমস্ত আমেরিকান যেন ভোট দিতে পারে সেটা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে আমরা সারা বিশ্বের দেশগুলোকেও তাদের গণতন্ত্র জোরদার করতে একই ধরনের অঙ্গীকার গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু নির্বাচনের দিন ভোটদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। কার্যত, ইতিমধ্যে নির্বাচন শুরু হয়ে গেছে। সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য আবশ্যক হলো নাগরিকদের মতামত প্রকাশ, সাংবাদিকদের ভীতিহীন অনুসন্ধান এবং সুশীল সমাজের ব্যাপক পরিসরে জনমত গঠনের সুযোগ নিশ্চিত করা।

আমি স্পষ্ট করতে চাই, বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না। আমরা শুধু এমন একটি প্রক্রিয়ার প্রত্যাশা করি, যার মাধ্যমে এ দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কে দেশ চালাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আগামী নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানোয় সন্তোষ প্রকাশ করছি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধে এ আইন সংস্কারে আইনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতিকেও আমি স্বাগত জানাই। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত। আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটি বসবে। সূত্র: ইত্তেফাক