‘ঈদে এমন আনন্দ আগে কখনো করিনি’

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। তবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে সেই আনন্দটা ধরা দেয় না পরিপূর্ণ রূপে। তবুও সমাজের কিছু ‘মানবিক হৃদয়’ সবসময় চেষ্টা করেন সবার সাথে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে।

এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। সবার সাথে ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।

রঙ-বেরঙের বেলুন দিয়ে বেদেবহরের খুপড়ি ঘরগুলো সাজিয়ে দেয়ার পাশাপাশি মেহেদীর রঙে রঙিন হয়েছে শিশু-কিশোরদের হাত। এছাড়া মিষ্টিমুখ ও উন্নতমানের খাবার পেয়ে মহাখুশি তারা। সেই সঙ্গে নতুন টাকার ঈদ সেলামি তো রয়েছেই। সবমিলে ভীষণ খুশি সবাই।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল শহর সংলগ্ন চিত্রা নদীর কোল ঘেষে একটি বেদে বহরের অবস্থান। অপরটি লোহাগড়া উপজেলার লক্ষীপাশা মোল্যার মাঠ এলাকায়।

চিত্রা নদী পাড়ের বেদে সম্প্রদায়ের সরদার বশির বলেন, স্বপ্নের খোঁজের ছেলে-মেয়েরা আমাদের সাথে এসে খাওয়া-দাওয়া করেছে। ঈদ স্যালামি (সেলামি) দিয়েছে। আনন্দ ভাগাভাগি করেছে।

মোল্যার মাঠ এলাকার বেদে সরদার আহমেদ বলেন, আমাদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলায়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা ঘুরে বেড়াই। প্রায় প্রতিবছরই বাইরে ঈদ করতে হয়।

এবার ঈদে লোহাগড়া উপজেলার মোল্যার মাঠের পাশে আছি। খুব মজা পাইছি। অনেক ছেলে-মেয়ে এসে আমাদের খোঁজখবর নিয়েছে। আমাদের ছোট ছেলে-মেয়েদের হাতে মিন্দি (মেহেদী) দেছে। বেলুন দিয়ে ঘর সাজাইছে। মিষ্টি ও স্যালামি দেছে। আগে কখনো এসব পাইনি।

বেদেবহরের ভাদুরি, অছিফা ও নিপাসহ শিশু-কিশোররা জানায়, আপুরা আমাদের মিন্দি দেছে। এই ঈদে খুব আনন্দ পাইছি। ঈদে এমন আনন্দ আগে কখনো করিনি আমরা।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহ পরাণসহ অন্যরা জানান, করোনার কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে এবারের ঈদের আনন্দ-আমেজ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তারা।

ঈদে বিলাসিতা এড়িয়ে একাধিক পোশাক না কিনে এবং পড়ালেখার খরচ থেকে টাকা জমিয়ে বেদে সম্প্রদায়ের মুখে একটু হাসি ফোঁটাতে পেরে তাদের ভালো লাগছে।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের স্বপ্নদ্রষ্টা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ জানান, ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করে নেয়ার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়।

সেই থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশু, ভাসমান বেদে সম্প্রদায় ও অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতা ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ও জীবনযাত্রা মানউন্নয়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ জয়লাভ করে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন।

‘সুখ স্বপ্নের সন্ধানে কাজ করব মোরা একই বন্ধনে’-এ স্লোগানে ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে চায়। সতেজ বলেন, আমাদের প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্মসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এমন ইতিবাচক কাজে অনুপ্রাণিত হবেন।

এদিকে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের ধান কর্তন, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ইফতার বিতরণ,

ঈদে ছিন্নমূল ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কাজ করে যাচ্ছে। সংগঠনে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪৫ জন। এদের বেশির ভাগই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন নামটি যেমন চমৎকার, তেমনি তাদের কার্মকান্ডও অনেক সৃজনশীল। তারা সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতধারায় এগিয়ে নেয়ার জন্য অনেক কাজ করছে।