এলো ত্যাগের ঈদ, সংযমের ঈদ

ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ রোববার (১০ জুলাই)। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ আশপাশের দেশে ঈদ উদযাপিত হবে।

ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করবেন সামর্থ্যবান মুসলমানরা।

এ কোরবানি শুধু পশু কোরবানি নয়, নিজের পশুত্ব, ক্ষুদ্রতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, অহংকারের কোরবানি করা।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর নিকট তাদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদের।’ (সূরা হজ, আয়াত নং ৩৭)

গতবারের তুলনায় এবারের ঈদুল আজহা জাঁকজমকে পালিত হবে। কারণ গতবারের মতো করোনার বিধিনিষেধ সেভাবে নেই এবার।

আনন্দের ঈদ গত দুই বছর ছিল বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দি, স্বজন হারানোর বেদনায় মলিন। এ বছর পরিস্থিতি বদলেছে। গত রোজার ঈদের পর কুরবানির ঈদেও সেই বাঁধন ছিড়ে আনন্দ উদযাপনের সুযোগ মিলবে অনেকের, তবে সবার সে ভাগ্য হবে না।

বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের দর বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে এবারের ঈদে।

দীর্ঘসময় ধরে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজার অনেকটাই অস্থির। আমদানি করা সব ধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এরইমধ্যে গতমাসেই সিলেট-সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে বয়ে গেল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। যে বন্যায় ভেসে গেছে অগণিত গবাদিপশু। এখনও হাহাকার বইছে বন্যাকবলিত অঞ্চলে।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণার বহু পরিবারে এবার ঈদ উৎসবে কষ্টও মিশে থাকবে।

এদিকে মহামারি করোনাও ফের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে। মৃতের সংখ্যা ৩ জনের বেশি গত কয়েকদিনে। আক্রান্তের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রায় দিনই।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক ব্যবহার করে ঈদের জামাতে যেতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে এবার সব ধরনের আলোকসজ্জায় নিষেধ করা হয়েছে। আরও অনেক ক্ষেত্রেই কৃচ্ছ্রের পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে। মানুষকে ব্যয় কমানোর, সঞ্চয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

অবশ্য স্বস্তি এনে দিয়েছেন লাখো কোটি প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিদেশের মাটিতে হাড় ভাঙা শ্রম দিয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা।

কুরবানির ঈদ উপলক্ষ্যে ১ থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলার।

ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৪ হাজার ২৬২ কোটি ডলারে উঠেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধের পরও রিজার্ভ ৪ হাজার ৬৬ কোটি ডলার রয়েছে।

করোনা, অর্থনৈতিক মন্দা, বন্যা বিধ্বস্ত হয়েও বিপুল উৎসাহে ঈদ উদযাপনে প্রস্তুতি নিয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।

পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে কেবল শুক্রবার ৩৫ লাখ সিম ব্যবহারকারী রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

কুরআনে আল্লাহ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপার্জিত হালাল মালের কিছু অংশ এবং আমি যা তোমাদের জন্য জমিন হতে বের করেছি, তার অংশ ব্যয় করো।’ (বাক্বারাহ ২৬৭)।

সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পরস্পরকে সহযোগিতার মাধ্যমে ত্যাগের মহিমা সারা দেশ পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করবে।

সামর্থ্যবানরা গরিবদের মাঝে গোশত, সেমাই, কাপড় বিলিয়ে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন।

এবার রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহার জামাত। এই জামাতে অংশ নেবেন মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বায়তুল মোকাররমে এবারও ঈদুল আজহার পাঁচটি জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টা, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টা, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টা, পঞ্চম ও সবশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদ উপলক্ষে পৃথক পৃথক বাণীতে দেশবাসীসহ মুসলিম উম্মাহর মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভু প্রেমের পরাকাষ্ঠা। আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) কুরবানি করতে উদ্যত হয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, অবিচল আনুগত্য ও অসীম আত্মত্যাগের যে সুমহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা ইতিহাসে অতুলনীয়। পবিত্র ঈদুল আজহা সবার জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ। দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলিম ভাইবোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাই।

ঈদ উপলক্ষে দেওয়া বাণিতে করোনা মহামারিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্ধারিত স্থান