প্রেমের টানে এসে বিয়ে করে উধাও ব্রাজিল কন্যা!

প্রেমের টানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসছেন ভিনদেশি তরুণ-তরুণী। পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম-নীতি মেনে হৈ-হুল্লোড় করে রীতিমতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন তারা। সারা জীবন একসঙ্গে থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ে সুখের সংসার গড়ার একবুক স্বপ্ন নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। কিন্তু বিয়ের পর সেই সকল দম্পতির আর কোন খোঁজ রাখেনি কেউ। ভিনদেশি ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর কেমন কাটছে তাদের দিন তা অনেকের কাছেই অজানা। জানতেও চায় না কেউ।

আদৌ কি তারা সুখে আছে, টিকে রয়েছি কি তাদের সংসার? এমন প্রশ্নও আবার অনেকেরই মনে। বর্তমান সময়ে যেভাবে প্রেমের টানে বিদেশ থেকে তরুণ-তরুণী বাংলাদেশে ছুটে এসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। সঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে এই প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় সঞ্জয়ের বাবা-মা, স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে। এদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সিলভা-সঞ্জয় দম্পতির বর্তমান পরিণতি।

২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ঘটনা। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির জামালপুর বাজারের মিষ্টির দোকানি বলাই ঘোষের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের সুপারভাইজার সঞ্জয় ঘোষের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রেম হয় ব্রাজিলের সাওপাউলোর বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবী ২৯ বছর বয়সী জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভারের। দীর্ঘ দেড় বছর প্রেম করার পর তারা সিদ্ধান্ত নেন সারা জীবন থাকবেন একসাথে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল ব্রাজিল থেকে রওয়া হয়ে ৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকায় পা রাখেন ব্রাজিলিয়ান তরুণী সিলভা।

 

সিলভাকে বরণ করে নিতে আগে থেকেই বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন প্রেমিক সঞ্জয় ঘোষ। সিলভাকে নিয়ে সঞ্জয় চলে আসেন তার নিজ বাড়ি জামালপুরে। পরের দিন মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল, ২০১৭) সকাল থেকেই ব্রাজিল কন্যার প্রেমের টানে ছুটে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ তাকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান সঞ্জয়ের বাড়িতে। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন সিলভা। পরে সিলভা ও সঞ্জয় নিরাপত্তার জন্য তৎকালীন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম রকিব হায়দারের কাছে আবেদন করলে থানা পুলিশ তাদের নিরাপত্তা জোরদার করেন।

প্রেমিক সঞ্জয়ের বাড়িতে একদিন থাকার পরই বুধবার (৫ এপ্রিল, ২০১৭) তারা চলে যান ঢাকাতে। পরের দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় সঞ্জয় ঘোষের জনৈক এক দাদার বাসায় রাতে তাদের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিয়ের বিষয়টি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন তৎকালীন জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী সরদার ও প্রতিবেশীরা। তবে বিয়ের বিষয়ে সঞ্জয় ও তার পরিবার কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছিলেন।

৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ১০ এপ্রিল (সোমবার) ঢাকা ছেড়ে ব্রাজিলে পাড়ি জমান জেইসা ওলিভেরিয়া সিলভা। এরপর থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাদের। সিলভা ব্রাজিলে ফিরে তার সেই ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেন। এমনকি যে সিম ব্যবহার করতো সেই সিমও বন্ধ করে রাখেন। ফলে সঞ্জয়ের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর যোগাযোগ করতে পারেনি সিলভার সাথে। ফেসবুকে প্রেম এরপর বিয়ে। তারপর বিচ্ছেদ! সংসার জীবন মাত্র ৪ দিনের। এখন পুরোটাই বিচ্ছিন্ন তাদের যোগাযোগ।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সঞ্জয়ের এক স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলেন, সিলভা নামের ব্রাজিলিয়ান যে তরুণী এসেছিলেন তিনি সঞ্জয়কে ভালোবেসেই এসেছিলেন এবং তাদের বিয়ে হয়েছিল এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কয়েকদিন থাকার অপর সে নিজ দেশে ফিরে গিয়ে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি। কেন রাখেননি তা জানিনা। তবে আমাদের ধারণা এরা লোভী প্রকৃতির একটি চক্র। ওরা বিভিন্ন দেশের ধনী ছেলে-মেয়েদের টার্গেট করে। টার্গেট মিস হলে ওরা আবার নিজ দেশে ফিরে যায়। সঞ্জয়ের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে।

 

সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ভাই এ বিষয়টা নিয়ে আর কোন সংবাদ হোক সেটা আমি চাচ্ছি না। সিলভা আমার শুধু একজন ভালো বন্ধু ছিল। এর বাইরে কিছুই না। আমার কাছ থেকে বাংলাদেশের গল্প শুনে সিলভা এদেশে আসার অনুভূতি প্রকাশ করেছিল। একজন বন্ধু হিসেবে আমি শুধু তাকে সহযোগিতা করেছি। সিলভা ব্রাজিলে চলে যাওয়ার পর কোন যোগাযোগ করেছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয় বলেন, ২০১৮ সাল থেকে সিলভার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন আর কোন যোগাযোগ নেই।

 

ফরিদপুর সরকারি টিচার ট্রেনিং কলেজের মনোবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অসিম কুমার ভদ্র বলেন, প্রথমত: ফেসবুকের মাধ্যমে সম্পর্ক কোন সম্পর্কই না। এখানে আবেগ আর মিথ্যার উপস্থিতিই বেশি। আবেগ আর মিথ্যার ওপর নির্ভর করে কোন বন্ধুত্ব বা ভালোবাসা টিকে না। দ্বিতীয়ত: বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বাঙালিদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে পারে না। যার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বা বন্ধুত্ব ভেঙে যায়।

এ ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিত বলে মনে করেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে কি আমাদের মধ্যেও এক ধরনের লোভ কাজ করে। আমাদের পরিবারগুলো ভাবে কোন বিদেশির সঙ্গে আমাদের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলে হয়ত পুরো পরিবার বিদেশে পাড়ি জমাতে পারবে। এই লোভেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যখন একটি মেয়ের রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়। তারপর ১৫ দিন বা ১ মাস পর যখন ফেলে রেখে চলে যায় তখন কিন্তু ওই পরিবারটা মারাত্মকভাবে সামাজিক চাপ ও ভেঙে পড়ে। তাই আমাদের সংস্কৃতি-পরিবেশের কথা ভেবে সবার উচিত বিদেশিদের সাথে ফেসবুকের প্রেম থেকে দূরে থাকা। বিয়ের তো প্রশ্নই ওঠে না।