বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আ.লীগের হুঁশিয়ারি, মাঠে নামলাম খেলা হবে

দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এখন থেকে বিএনপি-জামায়াত যেখানেই ‘সন্ত্রাস-নাশকতা’ করবে সেখানে প্রতিরোধ করবে তারা।

দলটির নেতারা বলেন, আজকে অগ্নিসন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে। আমরাও আজ থেকে মাঠে নামলাম। পেট্রলবোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না। কাউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে, আন্দোলনে, নির্বাচনে, খেলা হবে। সেই খেলায় আমরাই জয় লাভ করব।বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারো ধরা খাবে। এজন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সিরিজ বোমা হামলা দিবস উপলক্ষে বুধবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশনের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম এই দেশের মাটিতে। বন্দুকের নলে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়নি। আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আন্দোলনকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না, আন্দোলনেই আওয়ামী লীগের জন্ম।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক এই দলকে রুখতে হবে। আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, জঙ্গিবাদের ঠিকানা বাংলাদেশে হবে না। আগামী নির্বাচনের দেশের মানুষ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে এই দেশে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। বিএনপি গত নির্বাচনে ধরা খেয়েছে, এবারো ধরা খাবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা প্রস্তুত তো? খেলা হবে। রাজপথে আন্দোলনে, নির্বাচনে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, সেই খেলায় আমরাই জয় লাভ করব। এ জন্য আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশ কোনো দিন শ্রীলংকা হবে না, পাকিস্তান হবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা ভাবেন। তিনি জেগে আছেন, আমরা যেন ঘুমাতে পারি। মঞ্চে দলীয় নেতাকর্মী বেশি বসায় বিরক্তি প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, মঞ্চে এত নেতা? কোথায় থেকে এলো এত নেতা? নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা দায়। সবাই নেতা। নেতারা কর্মীদের সঙ্গে বসবেন। নেতা একজন শেখ হাসিনা, আর আমরা সবাই কর্মী।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ভেবেছিল সিরিজ বোমা হামলার ভয়ে মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে আসবে। কিন্তু তা হয়নি। তারেক-খালেদা জিয়ার পদক্ষেপের ঘৃণা প্রকাশ করছে। এই দেশ জঙ্গিবাদের নয়। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, সুখি-সমৃদ্ধ দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ এগিয়ে যাবে।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির দেশে জঙ্গিবাদ কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। বিএনপি নেতারা তাণ্ডব করেছিল। তিনি আরও বলেন, আরেকবার বিএনপিকে ঘরে তুলব। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বাংলা ভাইয়ের নেতা দণ্ডিত তারেক রহমান দেশকে অস্থিতিশীল করার স্বপ্ন দেখে। দেশে শান্তি বিঘ্নিত করতে চায়। মির্জা ফখরুল- কিছু করার ক্ষমতা আপনাদের নেই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি এবং গণতান্ত্রিক ও বাক-স্বাধীনতা আছে বলেই, যা খুশি বলেন। কিন্তু শিষ্ঠাচারবহির্ভূত কিছু করলে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথের সৈনিক।

সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, যারা আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাস বলে, তারা জানে না, আমরা এই মাটিতে জন্মেছি। পাঞ্জা ধরব, ওদের পরাজিত করে ছাড়ব। বিএনপি বলে ‘তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচনে আসবে না। শেখ হাসিনার অধীনে আসবে না’। কিন্তু আমরা আর কখনো অসাংবিধানিক পন্থা আনতে দিতে পারি না।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপি-জামায়াত বোমা হামলা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করতে চায়। আজ আমাদের শপথ নিতে হবে। যেখানেই বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগকে হুমকি দেবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আজকের একটা নমুনা দেখালাম। এরপর বিএনপি-জামায়াতকে বঙ্গোপসাগরে ফেলব।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। এই অপশক্তিকে রাজনীতি থেকে বিতারিত করতে হবে। যতদিন আমরা সেটা করতে পারব না, ততদিন আমাদের রাজনীতিতে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। সেই বাংলাদেশকে আজকে আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে তারা পাকিস্তান বানাতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ তা হতে দেবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সব ষড়যন্ত্র-চক্রান্তকে প্রতিরোধ করব।

আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে অগ্নিসন্ত্রাসীরা মাঠে নেমেছে। আমরাও আজ থেকে মাঠে নামলাম। পেট্রলবোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না। কাউকে অশান্ত পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ দেব না।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশে কোথাও সন্ত্রাস করতে দেব না। আজ আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী। আমরা প্রস্তুত। ঢাকা তো দূরের কথা বাংলাদেশের যেখানে অন্যায় হবে সেখানেই প্রতিবাদ হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করব- এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, এই রাজপথ সন্ত্রাসীদের নয়। এই রাজপথ জনগণের। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াতকে রাজপথ দখলে নিতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সমাবেশের পূর্বনির্ধারিত সময় ছিল বিকাল ৪টায়। তবে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হতে শুরু করে শাহবাগ থেকে প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল। সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল আকারে নেতাকর্মীদের ভিড়ে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মিছিল ও যানবাহনের কারণে সেগুনবাগিচা, মৎস্য ভবন, কাকরাইল ও শিল্পকলা এলাকার অলি-গলি পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।