যশোরের কাশিমপুর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের লতিফা খাতুন নামে এক নারী সুদ ব্যবসায়ীর কাছে নিজের সর্বস্ত হারিয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব ভার পেয়েছে যশোর পিবিআই।
মামলার প্রধান আসামি সুদ ব্যবসায়ী জহুরুল হক(৬০), এছাড়াও জবরদখল এর আসামি নিজাম উদ্দীন (৪৫),আবুল কালাম মৃধা (৫২), আব্দুল জলিল মৃধা, এবং তরিকুল ইসলাম এরা সকলকেই নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
লতিফা খাতুনের স্বামী সাবেক সেনাসদস্য শহিদুল ইসলাম, তারা নুরপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। ।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, মামলার বাদী লতিফা খাতুন নামের ঐ মহিলা জরুরি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় ০৭/১১/২০০৬ তারিখে একই এলাকার সুদ ব্যবসায়ী মোঃ জহুরুল হকের (সাবেক প্রধান শিক্ষক ) কাছ থেকে জমি ও দোকান বন্ধক রেখে সুদের পরে ২০ হাজার টাকা নেন।এই টাকার সুদ বাড়তে থাকায় ঐ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার সুদ-সহ ১৬/০৫/২০০৮ তারিখে বাদী জহুরুল মাস্টার কে ফেরত দেন।এছাড়াও জহুরুল মাস্টার নিজেই ঐ স্টাম্পে সই করে টাকা ফেরত নেন।
কিন্তু এর কিছু দিন পরেই জহুরুল মাস্টারসহ আসামি কয়েকজন ০৭/০৮/২০০৮ তারিখে লতিফা খাতুনের বাড়িতে এসে
মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়ে তিনটি টিনের ঘর ভেঙে জমি দখল করে এবং বলে লতিফা খাতুন তার কাছে ০৫ শতক জমি বিক্রি করেছে।এছাড়াও ঐ সময় লতিফা খাতুনকে এলাকা ছাড়া করে ।দীর্ঘ ৫ বছর লতিফা খাতুন ঐ সুদ ব্যবসায়ীর ভয়ে ঢাকায় অবস্থান করে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, লতিফা খাতুন নিজস্ব জমি ৪ শতক।বাকি ৮ শতক জমি তার বাবা রিয়াজ উদ্দিনের নামে রেজিস্ট্রি করা। যেখানে ৪ শতক জমি তার বাবা বেচে থাকা অবস্থায় কি করে ৫ শতক বিক্রি করে প্রশ্ন থেকে যায় এই খানেই।লতিফা খাতুনের বাবা মারা যায় ০৭/০২/২০০৮ তারিখে।
লতিফা খাতুনের ছেলে শাওন জানান, আমার মা যদি টাকার জন্য জমি বিক্রিই যদি করতে হয় এক পাশের জমি বিক্রি করবে ।শুধু মাঝ খানের অর্ধেক বাড়িসহ জমিতো আর কেউ বিক্রি করবে না।
খোজ নিয়ে আরও জানা যায়,বাদিনী ০৭/১১/২০০৬ তারিখে সুদের পরে ২০ হাজার টাকা নেয়ার ৭ দিন পরে ১৪/০৬/২০০৬ তারিখে সুদের টাকার স্টাম্প করার কথা বলে ঐ সুদ ব্যবসায়ী জহুরুল মাস্টার রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে গিয়ে লতিফা খাতুনের টিপ সই নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়।যেটা বুঝতে পারেনি।এখানেই চলে সুদ ব্যবসায়ীর মূল প্রতারণা।
এই মামলায় দেয়া সকল দলিল ও সুদের মুল স্টাম্পের কপি ও বাকি কাগজপত্র ওয়ান নিউজ বিডিসহ কয়েকটি পত্রিকা অফিসে লতিফা খাতুন জমা দিয়েছেন।
ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৮৯১ দাগে ০৭ শতক ও ৮৯৩ দাগে ৬ শতক জমি।এই দুই দাগের মধ্যে ৮৯১ দাগের ৭ শতক জমির উপরে বাদিনী ১৯৯৭ সালে পাকা বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন।বাকি ৮৯৩ দাগের ৬ শতক জমির উপরে কয়েকটি টিনের ঘর করে ভাড়া দিয়ে জীবন কাটাচ্ছিলেন।বর্তমানে সেখানেই আছেন।
অথচ ঐ জহুরুল মাস্টার (সুদ ব্যবসায়ী) বাদিনীর বাড়ি করা জমি ৮৯১ দাগ থেকে ৩ শতক ও ৮৯৩ দাগ থেকে ২ শতক জমি নিজের ক্ষমতায় ৫২ হাজার টাকা মুল্য দেখিয়ে দলিল করে নেয়। কিন্তু জহুরুল মাস্টার জবর দখল করে রেখেছেন শুধু ৮৯৩ দাগের ৫ শতক জমি। যেখানে তিন শতক জমি রয়েছে। এতেও জহুরুল মাস্টারের প্রতারণা ও জবর দখলের প্রমান পাওয়া যায়।
এই ঘটনার ৫ বছর বাদেই জহুরুল মাস্টার লতিফা খাতুনের কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকায় দলিল করা জমি তরিকুল নামে এক ব্যক্তির কাছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।এটাই হলো তার মূল ব্যবসা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, পিবিআই এর তদন্ত প্রাপ্ত কর্মকর্তা এস আই এনামুল বলেন এই মামলায় যে ধারা গুলো দেয়া হয়েছে সে প্রেক্ষিতে লতিফা খাতুনের সাক্ষর রেজিস্ট্রি অফিসের ভলিউম বইতে পাওয়া গেছে।কিন্তু তাহার বাবার এক শতক জমি কিভাবে রেজিস্ট্রি হয়েছে এবং বাকি বিষয়ে তদন্ত চলছে।পুরো তদন্ত শেষ করার পরেই রিপোর্ট জমা দিবেন বলে তিনি জানান।
এই ঘটনা ছাড়াও নুরপুর এলাকায় ঘুরে ঐ সুদ ব্যবসায়ী জহুরুল মাস্টার ও তার ভাগ্নে নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে কয়েকটি জমি, বাড়ি ও দোকান দখল করেছে, এমন প্রমান পাওয়া গেছে।
এমনকি অবসর প্রাপ্ত সেনাসদস্য সুবেদার তাহের হোসেনের বাড়িও দখল করেছে সুদ ব্যবসায়ী জহুরুল মাস্টারের ভাগ্নে নিজাম।যে উক্ত মামলার ২ নং আসামি। ঐ বাড়ি দখলের পরের দিনই বাড়ি হারানোর শোকে মারা যায় ঐ সেনাসদস্যের স্ত্রী।
যশোর সরকারী কৃষি ফার্মে চাকরিজীবী কাসেম নামে এক ব্যক্তির বাড়িসহ জমিও দখল করে তারা। খয়েরতলা বাজারে মসজিদের পাশে রিকশা গ্যারেজ অসিমের দোকানটিও দখল করে জহুরুল মাস্টার।
এছাড়াও আরও কয়েকটি জমি ও দোকান দখলের খবর পাওয়া গেছে। আরো তথ্য প্রমান সংগ্রহ চালাচ্ছে ওয়ান নিউজ বিডি প্রতিনিধি।