বরেন্দ্র ভবনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দুজন বরখাস্ত

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) দপ্তরে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং ক্যামেরা ও বুম ভাঙচুরের ঘটনায় দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তারা হলেন- ভাণ্ডার রক্ষক মো. জীবন ও গাড়িচালক আবদুস সবুর। এ দুজনের মধ্যে জীবন বিএমডিএ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক।

বিএমডিএ সচিব শরিফ আহমেদ সোমবার দুপুরে এক অফিস আদেশে দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বরেন্দ্র ভবনের সামনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপারসন রুবেল ইসলামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। অফিসের নতুন সময়সূচি ঘোষণার পর এ দপ্তরের কর্মকর্তারা নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে আসছেন কিনা সেই বিষয়টি তারা সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ) করে দেখাচ্ছিলেন।

অফিস শুরুর সময় সকাল ৮টা হলেও ২০ মিনিট পরে আসেন বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ। এসেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কার অনুমতি নিয়ে ভিডিও করা হচ্ছে? এটিএন নিউজে লাইভ চলাকালেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

এরপর জীবনসহ অন্য কর্মচারীরা লাইভ চলাকালেই বুলবুল হাবিব ও রুবেলকে মারধর শুরু করেন। মারতে মারতে তাদের বিএমডিএ ভবন থেকে মূল রাস্তায় বের করা হয়। ক্যামেরা ও বুম কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলা হয়।

এতে সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে দুই সাংবাদিক চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান।

ক্যামেরাপারসন রুবেল এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার বাম কান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে বরেন্দ্র ভবনের সামনে যান রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা। তারা দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করার দাবি জানান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান এলে তার কাছেও এ দাবি জানানো হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা ফিরবেন না বলে জানিয়ে দেন।

দুপুরে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান একটি কাগজ হাতে নিচে নেমে আসেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রধান কার্যালয়ের ভাণ্ডার রক্ষক মো. জীবনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রিজিয়ন এবং গাড়িচালক আবদুস সবুরকে নওগাঁ রিজিয়নে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।

তবে এই বদলি আদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেন সাংবাদিকরা। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, নির্বাহী সদস্য বদরুল হাসান লিটন, শরীফ সুমন, রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান শ্যামল জানিয়ে দেন দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

অবশেষে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ হামলায় বিএমডিএর অনেকে জড়িত ছিলেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের শনাক্ত করা না যাওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ উল্লেখ করে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানান, ঘটনার পর তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখেছেন। সে মোতাবেক দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএমডিএ চেয়ারম্যান বলেন, তারা নির্বাহী পরিচালকের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয় তখন ব্যবস্থা নেবে।