রহিমার মরদেহ পাওয়ার দাবি মেয়ের, নিশ্চিত নয় পুলিশ-পিবিআই

মহানগরীর দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমের (৫২) মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে পৌনে ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুটি পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য তিনি জানান।

তবে দৌলতপুর থানা পুলিশ, মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও ময়মনসিংহ পুলিশ বলেছে, বিষয়টি নিয়ে তারা মোটেও নিশ্চিত নয়।

ফেসবুকের পোস্ট ও পুলিশ নিশ্চিত না করায় বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয় মরিয়মের মোবাইল নম্বরে।

 

কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রহিমা বেগমের ছেলে এম এ সাদীর মোবাইল নম্বরে কল করা হয়।

 

ফোন ধরেন এক নারী। তিনি রহিমার মরদেহ উদ্ধারের ব্যাপারে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।

ফেসবুকে মরিয়মের পোস্ট

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার কাছাকাছি সময় নিজের ফেসবুক আইডিতে মায়ের লাশ পাওয়ার ব্যাপারে পোস্ট দেন মরিয়ম। লেখেন- ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি আমি এই মাত্র। ’

 

রাত ১২টা ৪ মিনিটে আরেকটি পোস্ট দেন তিনি। লেখেন- আর কারও কাছে আমি যাবো না। কাউকে বলব না আমার মা কোথায়! কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো না আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন। কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি। ’

 

কী বলছে পুলিশ-পিবিআই

ফেসবুক পোস্টে মরিয়মের দাবির ব্যাপারে দৌলতপুর থানায় যোগাযোগ করে বাংলানিউজ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু নিশ্চিত হতে পারিনি।

 

রহিমা বেগম নিখোঁজ হওয়ার পর এ ব্যাপার দায়ের হওয়ার মামলার তদন্ত করছে পিবিআই। সংস্থাটির খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মরিয়মের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

 

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের সঙ্গেও তারা কথা বলেছেন। কিন্তু তারাও বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নয়। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ জানিয়েছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানা এলাকা থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই নারীর বয়স ৩২ বছর উল্লেখ করে দাফন করা হয়েছে‌। খুলনায় যে নারী নিখোঁজ হয়েছেন তার বয়স ৫২ বছর। মরিয়ম মান্নান তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেছেন, পরনের কাপড়ের ছবি দেখে তিনি তার মায়ের লাশ শনাক্ত করেছেন।

 

পুলিশ সুপার আরও জানান, ফুলপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করা মৃতদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রেখেছে। তদন্ত কর্মকর্তা মরিয়ম মান্নানকে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ফুলপুর থানায় যাওয়ার জন্য বলেছেন। সেখানে তার ডিএনএ সংগ্রহ করে উদ্ধার করা মরদেহের ডিএনএর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। যদি ডিএনএ মেলে তাহলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ফুলপুর থানা পুলিশ মরদেহের যে বয়স উল্লেখ করেছে, তার সঙ্গে নিখোঁজ নারীর বয়স মেলে না। এছাড়া তারা মরদেহের ছবি দেখেছেন, তা দেখেও তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। সব মিলিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরে যে মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, তা খুলনার রহিমা বেগমের কিনা সে ব্যাপারে তারা মোটেও নিশ্চিত নন।

 

গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।

 

রহিমার ৬ সন্তান কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কখনো মাইকিং, কখনো আত্মীয়স্বজনদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের পর মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলাও দায়ের করেন। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআই’য়ে স্থানান্তর করা হয়।

 

পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এ ব্যাপারে বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর প্রক্রিয়া মেনে ১৭ সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআই পরিদর্শক আব্দুল মান্নান। এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতে বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।