পূূর্ণ ডোজ টিকার বাইরে প্রাপ্তবয়স্ক কোটি মানুষ

 

দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এখনও এক কোটির বেশি মানুষ পূর্ণ ডোজ টিকা পায়নি। এর মধ্যে ২২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নেয়নি। দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছে ৮৪ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। এদিকে, ৯ দিনের টিকার বিশেষ ক্যাম্পেইন শেষ হচ্ছে আজ শনিবার। এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ আর দেওয়া হবে না। নতুন কোনো গণটিকা কর্মসূচিও আর নেওয়া হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া আর কাউকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে না। বিশেষ ক্যাম্পেইনে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছে, শুধু তাদের জন্য দ্বিতীয় ডোজ সংরক্ষণে রাখা হবে। পূর্ণ ডোজ বাকি থাকা এক কোটি মানুষকে নিয়ে বিশেষ কোনো ভাবনা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এদিকে, সরকারের মজুত দুই কোটি টিকার মধ্যে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এক কোটি ডোজের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, চলমান ক্যাম্পেইনে মেয়াদ শেষ পর্যায়ে থাকা টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

তবে চলমান টিকার ক্যাম্পেইনে খুব একটা সাড়া মেলেনি প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে। কয়েক দফা বন্ধ ঘোষণা ও নানা তৎপরতার পরও টিকায় আগ্রহ দেখা যায়নি। অনেক কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতা ছিল না। স্বাস্থ্যকর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ১০টি কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

 

দুপুর ১২টার দিকে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিয়ে দুইজন স্বাস্থ্যকর্মী বসে রয়েছেন। কোনো টিকাগ্রহীতা নেই। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে মোট ৪৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে ১০ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ২০ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছে ১৬ জন। চলমান ক্যাম্পেইনের পাঁচ দিনের প্রায় একই চিত্র ছিল এই কেন্দ্রে।

এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ফিরোজ আলম সমকালকে বলেন, আগের মতো টিকাকেন্দ্রে আর মানুষ পাওয়া যায় না। নানা অজুহাত দেখিয়ে মানুষ টিকা নিতে চায় না। আগে এই কেন্দ্রে নিয়মিত ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ টিকা নিলেও এখন ৫০ থেকে ৬০ জনের বেশি হয় না। সরকার থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

একই চিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে। আগে এক দিনে আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ টিকা নিতে এলেও এখন গোটা ক্যাম্পেইনে টিকা নিয়েছে মাত্র আড়াই হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১২৩ জন আর দ্বিতীয় ডোজ ২০০ জন।

 

এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ওহিদুর রহমান বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের চেয়ে বেশি যাচ্ছে বুস্টার ডোজ। বিশেষ কর্মসূচির পাঁচ দিনে এক হাজার মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ও বুস্টার মিলে আরও ১ হাজার ৫০০-এর মতো হবে। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ নেই।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকার আওতায় এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৭ জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ৫৯ হাজার ৭১০।

 

এদিকে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এবারের ক্যাম্পেইনে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৪৯ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৪ লাখ ৫৬ হাজার ২০৩ জন। আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৮৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৫ জন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া আর কাউকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে না। কেউ যদি অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে না আসতে পারে, সে সুস্থ হলে টিকা নিতে পারবে। এর বাইরে কাউকে টিকা দেওয়া হবে না।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, চলমান ক্যাম্পেইনে এক কোটির বেশি ডোজ টিকা নিয়েছে মানুষ। যেসব টিকা মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল, সেগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের আর কোনো ক্যাম্পেইন করা হবে না। ক্যাম্পেইনে যাঁরা প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তাঁরা শুধু দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে পারবেন। তিনি জানান, অস্থায়ী ১৫ হাজার টিকাকেন্দ্র আর থাকছে না।

 

এখনও টিকা না নেওয়ার এক কোটি মানুষ কি আর টিকা পাবে না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে বিদেশে গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় চলে আসছে। তাই শনিবারের পর প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলবে না।