বিএনপির চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি শুরু আজ

bnp logo

রাজধানী ঢাকার ১৬টি জোনে সমাবেশের পর আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপের কর্মসূচি। চট্টগ্রাম মহানগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠের এই বিভাগীয় সমাবেশে প্রায় ১৫ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বুধবার থেকে শুরু হওয়া বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে জনগণের অভ্যুত্থানের প্রকাশ ঘটবে। এই অভ্যূত্থানের মধ্যে দিয়ে আমরা অনির্বাচিত, স্বৈরাচারী, গণতন্ত্রহরণকারী লুটেরা সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বুধবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন মহাসিচব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের নেতা–কর্মীরা এই সমাবেশে অংশ নেবে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি ৯টি বিভাগে গণসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। যার প্রথমটি বুধবার চট্টগ্রামে হচ্ছে। শেষ সমাবেশটি হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সমাবেশকে ‘মহাসমাবেশ’ ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

ঘোষিত এ কর্মসূচির অন্য সমাবেশগুলো হবে আগামী ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায়। এর আগে প্রথম ধাপে ২২ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে ব্যাপক লোক সমাগম হওয়ায় নেতাকর্মীরা এখন অনেকটা উজ্জীবীত।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়ির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়নগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম হত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় শহরে এ কর্মসূচি হচ্ছে। এসব কর্মসূচি দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও লাখ লাখ সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে এই সরকারের পদত্যাদের দাবি করবে।

তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে জনগণ এখন একাট্টা। আশা করি সরকার আমাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।

চট্টগ্রামের আজকের (বুধবার) সমাবেশ সম্পর্কে বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, সমাবেশে যাতে জনসমাগম বেশি হতে না পারে সেজন্য পুলিশ ও আওয়ামী লীগ চেষ্টা চালাচ্ছে। হামলা ও গ্রেফতার এড়াতে দলবদ্ধভাবে নেতা–কর্মীদের সমাবেশে যোগ দিতে বলেছেন নেতারা। কাউকে লাঠি নিয়ে আসতে বারণ করা হয়েছে। সমাবেশে বিশৃঙ্খলা যাতে না হয়, সে জন্য স্থানীয় একজন নেতার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কর্মীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি একেকজন নেতা কতজন কর্মী সমাবেশে নিয়ে আসবেন, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেন দায়িত্বশীল নেতারা। এ জন্য দুই সপ্তাহ ধরে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সভা ও বৈঠক হয়।

পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশ জনস্রোতে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই জনস্রোত থেকে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য হতে বার্তা দেওয়া হবে। নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। সেই নিরপেক্ষ সরকারকে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন দেশের নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে। জনগণের নির্বাচিত সংসদ হবে, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তৃণমূলের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেভাবে অংশ নিয়েছে তাতে আমরা অনেক আশাবাদী। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন। ১২ অক্টোবর থেকে ৩ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ বিভাগে সমাবেশ হবে। এরপর আগামী ১০ডিসেম্বর নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগের মহাসমাবেশ সফলে যা যা করা দরকার তা করা হচ্ছে। এ বিভাগের অন্তর্গত সব জেলার নেতারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা শুরু করেছেন। আশা করি ঢাকার মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। ওই সমাবেশ থেকে দলের নীতি নির্ধারণী নেতারা সরকার পতনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।