আ.লীগের কর্মসূচির চাপে বিএনপিকে বিদেশ চলে যেতে হবে : মির্জা আজম

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি বলেছেন, ‘বিএনপি ঢাকার প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছে ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। খালেদা জিয়া হলো চুন্নি, এতিমের টাকা চুরি করে কারাগারে বন্দী। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই মাসে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান যেভাবে পরাজয় মেনেছিল, তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের কর্মসূচির চাপে বিএনপিকে পরাজয় স্বীকার করে বিদেশে চলে যেতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বিকালে যাত্রাবাড়ীতে থানা ও থানার অধীনে ওয়ার্ড সমূহের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মির্জা আজম বলেন, ‘আজকে ৭৫’র খুনি, ৭১’র রাজাকার এবং ২০০৪ সালের সকল খুনিরা আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করার জন্য এক হয়েছে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রতিরোধ যুদ্ধে আমাদের বিজয়ী হতে হবে। সেই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে।’

ডিসেম্বরে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার নিদের্শনা দিয়ে মির্জা আজম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড, ইউনিট কমিটির উদ্যোগে বড় জনসভা করতে কেন্দ্রের বা মহানগরের অনুমোদন প্রয়োজন নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্ধিত সভা, বিশেষ সভা, জনসভা করতে করো নিদের্শনার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওয়ার্ড, ইউনিট বা থানা কমিটি যে কোন কর্মসূচি দিতে পারে। রাজনৈতিক দল তখনই মোটাতাজা হয় যখন রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকে। কর্মসূচি পালন করা সাংগঠনিক দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব যদি পালন করতে পারি, তাহলে সেই ষড়যন্ত্রকারীরা যারা বলছেন- আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ২৪টি থানা প্রত্যেকে বড় মিটিং করবে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির চাপে বিজয়ের মাসে স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি বিএনপিকে পরাজয় স্বীকার করে বিদেশ চলে যেতে হবে। ১৬ ডিসেম্বরের আগে বিএনপি নামক দলটিকে বিদেশ চলে যেতে হবে।
ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে। ঘোষণা করেছে, ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার নিদের্শনায় দেশ চলবে। খালেদা জিয়া হলো চুন্নি। এতিমের টাকা চুরি করেছে। তারা ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশকে ৫বার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান করেছিল। খালেদা জিয়ার ছেলে সরকারের ভেতরে আরেকটি সরকার গঠন করেছিল। বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। সেই তারেক রহমান আজকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

মাদক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা যেন কমিটিতে না আসে- সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ৪১ জন বক্তার মধ্যে প্রায় ১০ জনই বলেছেন- নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন সন্ত্রাসী, কোন চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতা যেন কমিটিতে না আসতে পারে। থানা-ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের যারা দায়িত্ব পাবেন তাদেরকে মনে রাখতে হবে যেন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ীরা সংগঠনে জায়গা না পায়। কারণ যারা এসব কথা বার বার বলেন- তারা কিন্তু কাজ উল্টো করেন।

২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারও প্রধানমন্ত্রী করতে হবে জানিয়ে মির্জা আজম বলেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশবিরোধী সংগঠন, ১৯৭৫ সালে যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, সেই খুনির দল বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য সবকিছু করেছিলেন। এরপর খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করেছিল। আমাদের নেত্রীকে লক্ষ্য করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। সেসময়ে ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। শত শত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে আল্লাহপাক রক্ষা করেছিল। কারণ শেখ হাসিনার মৃত্যু হলে ৭১ সালে যারা যুদ্ধপরাধ করেছে, ধর্ষণ-লুণ্ঠন করেছে তাদের বিচার হবে না। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশটাকে পাল্টে দিয়েছেন। ১৪ বছর আগে যাত্রাবাড়ীতে ফ্লাইওভার ছিল না। এখন যাত্রাবাড়ী দিয়েই মানুষ পদ্মা সেতু পার হচ্ছে। আগে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যেতে সময় লাগতো ৫ ঘণ্টা। এখন দেড় ঘণ্টায় আমরা যেতে পারি। দেশের উন্নয়নের যে ধারা চলছে তা ধরে রাখতে হলে আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণকে ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা থানা নিয়ে ঢাকা-৫ আসন গঠিত। এখানকার এমপি প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যু জনিত কারণে দুই বছর আগে উপনির্বাচন হয়েছিল। এই নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে এসে দেখেছি, সাংগঠনিক করুন অবস্থা। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি আনতে পারিনি। মাত্র ১০ শতাংশ ভোটার হাজির হয়েছিল। কারণ প্রতিটি থানাতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ওয়ার্ডে দু’জন করে নেতা দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারা পুর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। তখন মনে হয়েছিল খরায় পড়েছে সংগঠন। কিন্তু আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে প্রাণ ফিরেছে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা আওয়ামী লীগে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ৭৩ বছরের ইতিহাসে সম্মেলন করে কখনো ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়নি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সেই কাজটি আজকে করতে সক্ষম হয়েছে। তারা টিম গঠন করেছে। দক্ষিণে ৬শ’র অধিক ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭৫টি ওয়ার্ড ও ২৪টি থানা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। এ জন্য বর্তমান নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানাই।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, ডিএসসিসি’র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ।