কঠোর ও সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ

 

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির ঘোষিত মহাসমাবেশকে মুখে গুরুত্ব না দিলেও ভেতরে ভেতরে সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ। এই মহাসমাবেশ ঘিরে ‘সরকার পতন’-এর কঠোর আন্দোলনের হুমকিকে ‘কঠোরতার সঙ্গেই’ রাজপথে মোকাবিলার চিন্তাভাবনা চলছে ক্ষমতাসীন দলটিতে। এরই মধ্যে বিএনপির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে শুরুও করেছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারক নেতারা।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দাবি, বিএনপির মহাসমাবেশ এবং সেখান থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের হুঁশিয়ারিতে নতুনত্ব কিছু নেই। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৩ বছরে বিএনপি ও তার মিত্রদের তরফে এমন কর্মসূচি কিংবা ঘোষণা আগেও অনেকবারই এসেছে। আবার কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ওই মহাসমাবেশে হাজির করা এবং ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে- এমন ঘোষণার বাস্তবতা ও কোনো ধরনের ভিত্তিই নেই। ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থেকে হতাশা-জর্জরিত নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা রাখতেই এমন কথা বলছেন বিএনপি নেতারা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিএনপির দায়িত্বশীল কোনো নেতা নয়, বরং দ্বিতীয় সারির নেতাদের মুখ থেকেই এমন ‘বালখিল্য’ কথাবার্তা আসছে। উপরন্তু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির প্রথম সারির কোনো কোনো নেতা গণমাধ্যমের কাছে নিজ দলের নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে বক্তব্যও দিয়েছেন। বিএনপির এসব নেতাও বলেছেন, আসলে দলীয় নেতাকর্মীকে চাঙ্গা রাখতেই এমন কথা বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির কয়েকজন নেতার এমন ‘মাঠের বক্তৃতা’কে গুরুত্ব দেওয়ার মতো কিছু নেই।

এর পরও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্য থেকে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ ওই মহাসমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালানো হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাজপথে সতর্ক থেকে রাজনৈতিকভাবে বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

অবশ্য দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির মহাসমাবেশের প্রায় দুই মাস বাকি থাকায় এ নিয়ে এখনই বড় ধরনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মহাসমাবেশ ঘিরে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে, বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণের সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীকে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশনা আসতে পারে- এমনটিও জানিয়েছেন দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। তবে বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা কোনো কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা আপাতত নেই বলে জানিয়েছেন কয়েকজন নেতা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় ফোরামের একাধিক সভা-সমাবেশে বলেছেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি নেতারা ‘আন্দোলনে সরকারের পতন হবে’- এমন বক্তব্য দিয়ে তাঁদের হতাশ নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করতে চাইছেন। ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশ ও এটি ঘিরে বিএনপি নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিও এমনটাই। তবে সরকার পতনের বিএনপির অলীক স্বপ্ন কোনোদিনই পূরণ হবে না। রাজপথে জন্ম নেওয়া আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভও নেই।

 

এদিকে, নির্বাচন কমিশন থেকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধের নজিরবিহীন ও রহস্যজনক ঘোষণার পর বিএনপির সভা-সমাবেশ বিষয়ে আওয়ামী লীগ ফের কঠোর অবস্থানে ফিরে গেছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের আগে বিএনপির ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের অবস্থান বদলেছে। এর আগে গত বুধবার বিএনপির চট্টগ্রামের গণসমাবেশ সরকার সমর্থকদের তেমন কোনো রকম বাধার মুখে পড়েনি।