রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে টিসিবির পণ্য থেকে দুইশত পরিবার বঞ্চিত

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে টিসিবির পণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে একটি ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং রাখালগাছি ইউনিয়নে। ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টুর সাথে ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ইদুর দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান টিসিবির পণ্য তুলে নিজ হেফাজতে নিয়ে বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার এই ইউনিয়নের পণ্য বিক্রির দিন ছিল। ইউপি চেয়ারম্যান নিজের পচ্ছেন্দের মানুষের অতিরিক্ত পণ্য বিক্রি করে টাকা গ্রহণের ছবি ভাইরাল হয়। এনিয়ে পুরো উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ইদু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করেন। সেখানে তিনি চেয়ারম্যানের বিচারসহ সাধারণ মানুষ যাতে সরকারি সুবিধা পায় তার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, সরকারি এই সুযোগ সুবিধা থেকে কেউ যাতে বঞ্চিত না হয় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারি সাধারণ মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য যাতে কম দামে সহজে ক্রয় করতে পারে তার জন্য টিসিবি থেকে স্বল্প মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কার্ড করা হয়। কিন্তু ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ নং রাখালগাছি ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৪৭ জনের কার্ড দেওয়া হয়। এই ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে প্রায় দুই শত মানুষের কার্ড পায়। চলতি বছরে সাধারণ মানুষ এই কার্ডের সুবিধা পাঁচবার পেলেও ৭ নং ওয়ার্ডের কোন মানুষ এই সুবিধা পায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টুর সাথে ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য ইদ্রিস আলী ইদুর সাথে দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণষ মানুষ সরকারি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এ ব্যপারে টিসিবির ডিলার শাহবুদ্দিন বলেন, সরকারি গুদাম থেকে পণ্য তোলার পর একজন ট্যাগ অফিসারের নেতৃত্বে এই পণ্য বিক্রি করা হয়। ইউনিয়নের সকাল ১০টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত পণ্য বিক্রির সময় দেওয়া হয়। এসময়ে যাদের কার্ড আছে তারা এসে পণ্য ক্রয় করে নিয়ে যায়। এরপর যে পণ্য থাকে কিম্বা যারা আসে না তাদের ওই পণ্য উন্মুক্ত করে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান টিসিবির পণ্য তুলে নিজে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যে কারণে সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধা থেকে বার বার বি ত করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু বলেন, টিসিবির পণ্য নিতে সবাই আসে না। বিকাল চারটার পর টিসিবির পণ্য উন্মুক্ত করা হয়। তখন সাধারণ মানুষ যাদের কার্ড নেই তারা এসব পণ্য কিনতে পারে।

৭নং ওয়ার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ওয়ার্ডে ১৭২ জনের কার্ড ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ইদুর কাছে আমি নিজ হাতে দিয়েছি। সেই কার্ড উনি বিতরণ করেছে কি না আমি নিজে জানি না।

তবে এ ব্যপারে ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী ইদু বলেন, যখন কার্ড করা হয়, তখন সেখানে কিছু ভুল ভ্রান্তি ছিল। আমি কার্ডগুলো ঠিকঠাক করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিই। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমাকে জানিয়ে দেয় কার্ড ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার কার্ডগুলো দেওয়া হয়নি। আমার ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধা থেকে বারংবার বি ত হচ্ছে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মুনিয়া বেগম বলেন, সরকারি সুবিধা থেকে যাতে কোন মানুষ বি ত না হয় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমি টিসিবির পণ্য কেনার জন্য কার্ডধারী কোন মানুষ বি ত না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।