দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা নেই, জানিয়েছে ডব্লিউএফপি

বিশ্ব খাদ্য সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেইনিকো স্কালপেলি এ তথ্য জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সচিবালয়ের কৃষি মন্ত্রণালয়ে ডব্লিউএফপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ডব্লিউএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেইনিকো স্কালপেলি।

সাংবাদিকদের কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা গত ১৫ বা ১২-১৩ বছর ধরে তেমন কোনো খাদ্য সহযোগীতা নেইনি। ইউএসএইড বছরে এক লাখ টনের মতো গম আমাদের দেয়। এটা ছাড়া বিদেশ থেকে আমরা কোনো খাদ্য সহযোগীতা নেইনি।

তিনি বলেন, ডব্লিউএফপি-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডোমেইনিকো স্কালপেলি আমাকে বলেছেন যে তাদের কাছে তথ্য আছে- কোনো ক্রমেই বাংলাদেশে খাদ্য সংকট বা দুর্ভিক্ষ হওয়ার সামান্যতম শঙ্কাও নেই। তবে যেহেতু এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু, তাই তিনি বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা বলবেন না। আমি জানতে চেয়েছিলাম তাকে রেফার করতে পারব কিনা। তিনি সম্মতি দিয়েছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ইউএন ও বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন ডোনাররা অনুমান করছে পৃথিবীতে একটি খাদ্য সংকট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ও কাজ করছে।

শঙ্কার মধ্যেও এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, আমন আমাদের মূল ফসল। শ্রাবণ মাসে মাত্র একদিন বৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম, কৃষকরা হয়তো ধান লাগাতেই পারবেন না। উৎপাদন কমে যাবে। কিন্তু এই প্রতিকূলতার মধ্যেও সেচ দিয়ে কৃষকরা ঠিকই ধান লাগিয়েছেন। ভাদ্র মাসে ভালো বৃষ্টি হয়েছে। তারপর সাইক্লোনের সময় যে বৃষ্টি হয়েছে, সেটাও যথেষ্ট ছিল। সবাই বলছে, স্মরণকালে সবচেয়ে ভালো ধান হয়েছে।

আগামী মৌসুমের জন্য দেশে পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গরিব, সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে টাকা নিয়ে খাবার কিনতে পারছেন না এমন পরিস্থিতি হয়নি। আগামী মৌসুমের আলু ও বোরোর জন্য যে সার দরকার, আমাদের তা আছে। আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি আছে।

উৎপাদনে সমস্যা না থাকলেও বণ্টনে সমস্যা থাকায় দাম বাড়ছে, এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের জন্য খুব বিব্রতকর। উৎপাদন আসলেই খুব ভালো হচ্ছে। এগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক কিছু সমস্যা আছে। আমি এটা অস্বীকার করবো না। পরিবহন খরচ তারপর নানা ভোগান্তি তো আছেই। আমার মনে হয় আগামী ৬-৭ দিনে সারাদেশ শীতের সবজিতে ভরে যাবে। এগুলো কেনার মানুষ পাওয়া যাবে না। তিন চারদিনেই দাম অর্ধেক হয়ে গেছে।

চাঁদাবাজি বন্ধে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হয়রানি বন্ধে যা করণীয় তা সম্মিলিতভাবে করতে হবে। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেখা যায় দুই-একদিন বন্ধ থাকে, আবার শুরু হয়। আমি বলছি না যে ব্যবস্থাপনায় একদম ঘাটতি নেই। কিন্তু এ ধরনের হয়রানি অনেক কমে এসেছে।

ডলার সংকটে খাদ্য আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি সার আমদানিতে কোনো সমস্যা তৈরি করা যাবে না। এটার পেমেন্ট সহজ করতে হবে। কিন্তু খাদ্য আমদানিতে কিছু প্রভাব পড়ছে। গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পরিমাণ খাদ্য আমদানি হয়েছে। কিন্তু এতো কম আমদানির পরও কি দেশে খাদ্য নিয়ে কোনো কথা আছে? হয়নি। এটা কিন্তু কেউ জানে না। তবে বিদেশ থেকে যে দামে আনতে হচ্ছে তা এখানে বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। প্রায় ৮০০ প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ২-৩ লাখ টনও আসেনি।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে খাদ্যের দাম বাড়ার ট্রেন্ড নাই। খাদ্যের দাম কমেছে বলেই মূল্যস্ফীতি গত মাসে কমে এসেছে। তবে আমি মনে করি এখন আমনের মৌসুম, ধান কাটার মাস। তাই দাম আরও কমা উচিত ছিল।

ডলার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে ডলার সংকট হবে না। এগুলোর সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় ডলার দিতে পারবে। এখনও ২৭ বিলিয়ন রিজার্ভ আছে।