আজ যশোর স্টেডিয়ামে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা, প্রস্তুত যশোরবাসী

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যশোরে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ বছর পূর্বে যে স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়েছিলেন সে জায়গা যশোর স্টেডিয়ামে এ অঞ্চলের মানুষের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লাল গালিচা দিয়ে সাজানো হয়েছে সভামঞ্চ । প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে প্রবেশ করবেন সেই পথ থেকে শুরু করে মঞ্চ পর্যন্ত ঝকঝকে চকচকে লাল গালিচায় মুড়ে দেয়া হয়েছে।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জনসভা সফলভাবে বাস্তবায়নে মঞ্চ সাজসজ্জা উপ-পর্ষদের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ জানান, সভাম প্রস্তুত করা হয়েছে। নৌকার আদলে নির্মিত মে র দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট ও প্রস্থ ৪০ ফুট। মূল স্টেজ করা হয়েছে ৮০ ফুট বাই ৪০ ফুট। মঞ্চর পেছনে ৭৬ ফুট বাই ১০ ফুট ব্যানার টাঙানো হয়েছে। চারুকলার ছাত্রদের দিয়ে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জনসভার ব্যাক স্ক্রিন করা হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক উপ-পর্ষদের আহ্বায়ক সুখেন মজুমদার জানান, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশকে সুশৃঙ্খল ও উৎসবমুখর করে তুলতে ৪শ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির সদস্যরা সমাবেশের প্রবেশমুখ, সমাবেশ স্থল ও সমাবেশে আগতদের সহযোগিতা করবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার স্থল পরিদর্শন করেছেন। জনসভাস্থলের প্রস্তুতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘২৪ নভেম্বর যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভা কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে পাল্টা কর্মসূচি নয়। আমরা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি বলেই এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।’

নানক আরও বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন দেশবাসীর কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ; তেমনি দলীয়ভাবেও আওয়ামী লীগের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২৪ নভেম্বর যশোর শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে যশোরে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এ বিষয়ে নানক বলেন,‘এই জনসভা শুধু স্টেডিয়ামের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকবে না; সমগ্র যশোর শহরেই একটি জনসভাস্থলে রূপ নেবে। এই জনসভা আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২৭ মাস পর জনগণের সামনে সরাসরি কোনও জনসমুদ্রে উপস্থিত হবেন।’

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা উপলক্ষে গতকাল বুধবার দুপুরে যশোর শহরের কাজীপাড়ায় ‌‘কাজী শাহেদ সেন্টারে’ যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর পর তিন মেয়াদে ক্ষমতায় এসে যশোরবাসীকে অনেক কিছু উপহার দিয়েছেন। তিনি আরও উপহার দেবেন। প্রধানমন্ত্রী যশোরবাসীকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজ দিয়েছেন, শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক দিয়েছেন, ভৈরব নদ খনন শুরু করেছেন। দক্ষিণঅঞ্চলের মানুষদের প্রাণের দাবি পদ্মা সেতু ও কালনা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। দেশের মূল ভূখ-ের সাথে যশোরের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে সুন্দরভাবে। কালনা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী যশোর-খুলনা তৃতীয় অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছে।’

সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের কিছু প্রাপ্তি বাকি আছে এখনও। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, তিনি যেন যশোরকে সিটি করপোরেশন করে দেন। যশোর মেডিক্যাল কলেজের সাথে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে দেবেন। যশোর বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করে দেবেন। তিনি সব সময় আমাদের দক্ষিণবঙ্গের মানুষের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে থাকেন। আমরা তার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’
করোনা মহামারির পর রাজনৈতিক কর্মকতা হিসেবে ঢাকার বাইরে জনসভার জন্য যশোরকে বেছে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে যশোরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। সারা জেলায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। মানুষের মাঝে প্রচুর উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। মানুষকে সমবেত করতে সকল জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীকে দেখার জন্য আজকের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন একটি ধারা সূচিত হবে।’

যশোর ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় প্রাইভেটকার, মাইক্রো ও বাস মিলে ৫ হাজার গাড়ি আসা-যাওয়া ও পার্কিংয়ের জন্য ১০টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, পরে আরো ১০টি পার্কিং পয়েন্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৪টি স্থানে মন্ত্রী-এমপি ও একটিতে অন্যান্য ভিআইপি এবং বাকি ৫টি স্থানে দলীয় নেতাকর্মীরা গাড়ি পার্কিং করতে পারবেন। জনসভার দিন শহরে যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। সভাস্থলে আসার জন্য নির্দিষ্ট ১২ টি রুট নির্ধারন করা হয়েছে। যানজট এড়াতে পথচারীদের জন্য রোড ম্যাপ করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ সতর্ক থাকবে।