রোনালদোরও শেষের শুরু

দোহার আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিংগুলোতে বিশ্বকাপের যেসব তারকার ছবি জ্বলজ্বল করছে, নিঃসন্দেহে সেখানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রয়েছেন। আটত্রিশ ছুঁইছুঁই এই পর্তুগিজ তারকার আকর্ষণও প্রবল বিশ্বকাপে। শুধু ভক্তকুলই নয়, মিডিয়াও প্রতিদিন ফলো করছে তাঁর ইনস্টাগ্রাম আর টুইটে। কারণ, দোহায় পা রাখার পর থেকেই একের পর এক রহস্যের জন্ম দিচ্ছেন তিনি। ম্যানইউকে তুলাধুনা করার পর ক্লাব ত্যাগ, মেসির সঙ্গে একই ফ্রেমে দাবা খেলার ছবি- রোনালদো মুখ খুললেই যেন এখন ‘বোমা’। তা সেই বিস্ম্ফোরণের জন্যই গতকাল পর্তুগালের সংবাদ সম্মেলনে ভিড় হয়েছিল অনেক। আজ ঘানার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামছে পর্তুগাল। অধিনায়ক হিসেবে রোনালদোর জন্যই চেয়ার রিজার্ভ ছিল, কিন্তু এলেন তাঁর সতীর্থ ব্রুনো ফার্নান্দেজ। শোনালেন, প্রতিপক্ষ ঘানা সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক তাঁরা। কেননা আগের রাতেই তাঁরা দেখেছেন, আর্জেন্টিনার অবস্থা কী হয়েছিল! ‘বিশ্বকাপে প্রতিটি দলের ব্যবধান কমে আসছে। টেকনিক্যালি এখন সব দলই নিজেদের উন্নতির জায়গায় নিয়ে গেছে। ঘানার খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে বেশ শক্তিশালী এবং তাদের গতিও ভালো। তার পরও ম্যাচটিতে সব ধরনের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’

কিন্তু ব্রুনোর মুখ থেকে তো এসব শোনার জন্য শ্রোতারা আসেননি। তাঁরা শুনতে চান রোনালদোর কথা। এই যে রোনালদো ম্যানইউ ছেড়ে দিলেন, সেটা কি তাঁকে জানিয়েছিলেন? ব্রুনোর সরল উত্তর, ‘নাহ, ওটা ক্রিশ্চিয়ানোর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সে নিশ্চয় পরিবারের সঙ্গে দেখা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এখন বিশ্বকাপে এসেছি, সবাই আমরা সেদিকেই ফোকাস করছি।’ রোনালদোও কি তাই? মেসির মতো তাঁরও তো এটাই শেষ বিশ্বকাপ। অন্তত বয়স সেই ইঙ্গিতই দেয়। ২০০৬, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ বিশ্বকাপ হয়ে আজ পঞ্চমটিতে নামতে যাচ্ছেন। বিশ্ব আসরে ১৭ ম্যাচে ৭ গোল রয়েছে তাঁর। ক্লাব ফুটবলে রাজত্ব করলেও জাতীয় দল নিয়ে খুব বেশি কখনোই তিনি এগোতে পারেননি। অবশ্য একা তো আর এগোনো যায় না। তাই এবার রোনালদোর জন্যই বুঝি পর্তুগাল কিছু একটা করতে চায়, ‘আমরা বলছি না, আমরা ফেভারিট। বাস্তবে পা রেখেই বলছি, আমাদের সামর্থ্য রয়েছে অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার।’ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস অন্তত চান রোনালদোর জন্য ভালো কিছুর মঞ্চ সাজাতে।

যেমনটি আর্জেন্টিনার গোটা দল চায় মেসির জন্য। এমনিতে ক্লাব ফুটবলে দুই তারকা দুই মেরুর হলেও শেষের পথে এসে বুঝি বা সঙ্গী হয়েছেন তাঁরা। সেদিন দু’জনেই একই সময়ে অভিন্ন একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে দু’জনকেই একটি দাবার বোর্ডের চাল চালতে দেখা যায়। ইউরোপের বিখ্যাত একটি ট্রাভেল কিটস কোম্পানি দু’জনকে পাশাপাশি বসতে রাজি করিয়েছিল। এমনই আরেকটা চেষ্টা নাকি চলছে কাতারেও! গুঞ্জনের কারণ পিএসজির ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আল খেলাইফি। মেসির সঙ্গে রোনালদোকেও নাকি তিনি পিএসজিতে নিতে চান। বিশ্বকাপের মাঝে ম্যানইউ ছাড়াটাও নাকি সে কারণেই। দোহাতেই নাকি রোনালদোর সঙ্গে সেই কথা হয়েছে। এই গুঞ্জনের সবকিছুতেই ‘নাকি’ শব্দটির কারণ ও বিজ্ঞাপনের ওই ছবিটা।

যাঁদের দু’জনকে নিয়ে মিডিয়া দুধ আর ছানা কেটেছে সব সময়, তাঁরাই বুঝি বিশ্বকাপে এবার শেষের পথে একসঙ্গে যাচ্ছেন। মন্দ কী!