কুয়েতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

 

কুয়েতে প্রবাসীদের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

কুয়েতে শতাধিক বাংলাদেশি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের দাবি, আকামা পরিবর্তনসহ আইনি সহায়তার জন্য একটি ফার্মে জমা দেয়া ৬০ লক্ষাধিক টাকা খোয়া গেছে। পাশাপাশি ওই ফার্মের আইনজীবিরও ৩০ লক্ষাধিক টাকা খোয়া গেছে। এই ৯০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে এক বাংলাদেশি কুয়েত থেকে দেশে পালিয়ে এসেছে।এঘটনায় প্রতারণার শিকার বাংলাদেশি ও কুয়েতি আইনজীবি বাংলাদেশি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুয়েতের বাংলাদেশি দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম রুবেল (৪২)। তিনি ঢাকার কেরানিগঞ্জ এলাকার সিরাজনগর গ্রামের বাসিন্দা।কুয়েতপ্রবাসী যশোর সদর উপজেলার আরবপুর এলাকার বাসিন্দা ইউসুফ আলী জানান, কুয়েতে কোম্পানিতে আকামা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আইনি সহায়তার জন্য শতাধিক বাংলাদেশি স্থানীয় ফার্ম ‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’ এ আবেদন করেন। সেখানে আইনজীবি’র ফি হিসেবে তারা ১৯ হাজার ৭৮৫ কুয়েতি দিনার জমা দেয়। ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ১৩৭ টাকার সমপরিমাণ ওই দিনার গ্রহণ করেন ওই অফিসে সহকারী হিসেবে কর্মরত রুবেল।

একইসঙ্গে ওই ফার্মের আইনজীবি মুনা আল বাসরি’রও ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৩ টাকার সমপরিমাণ ১০ হাজার কুয়েতি দিনার তার অফিসে রক্ষিত ছিল। এই ৯১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৯০ টাকার কুয়েতি দিনার নিয়ে রুবেল গত ২৪ জুলাই কাউকে না জানিয়ে দেশে চলে আসে।

ঘটনার পরপরই বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারণার শিকার বাংলাদেশিরা এবং কুয়েতের আইনজীবি মুনা আল বাসরি কুয়েতের বাংলাদেশি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেন।

বগুড়া জেলার গাবতলী এলাকার মোহাম্মদ রানার অভিযোগ, তিনি ১৮ বছর ধরে কুয়েতে অবস্থান করছেন। আকামা পরিবর্তনের জন্য তিনি ২০০ দিনার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আইনি সহায়তা না দিয়েই রুবেল তারসহ শতাধিক বাংলাদেশির টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’র আইনজীবি মুনা আল বাসরি জানান, রুবেল তার ও তার ক্লাইন্টদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এমনকি যাদের টাকা নিয়েছে তাদের কাগজপত্রও নষ্ট করে ফেলেছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি দূতাবাসে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কুয়েতের বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত কাউন্সেলর (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ১০০ বাংলাদেশি ও কুয়েতি আইনজীবির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, ঢাকার জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

কাউন্সিলর (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন উল্লেখ করেন, মাঝে মধ্যেই এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। নানান কায়দার প্রতারকরা কুয়েতি ও বাংলাদেশিদের কাছ থেকে কুয়েতি দিনার সংগ্রহ করে। কুয়েতিদের কখনও বাড়ি করা কিম্বা ব্যবসায় বিনিয়োগ অথবা বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও ব্যবসাসহ নানান লাভজনক খাতের কথা বলে টাকাগুলো সংগ্রহ করে। কুয়েতি দিনারের মূল্যমান অনেক বেশি হওয়ায় ১০ হাজার দিনার সংগ্রহ করতে পারলেই কিন্তু সেটি ৩০ লক্ষাধিক টাকা। ফলে ওই টাকা নিয়েই গোপনে তারা দেশে পালিয়ে যায়। তখন পাসপোর্টের ঠিকানা ধরে তাকে খুঁজে বের করে টাকা উদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারকরা আর ওই ঠিকানায় ফেরে না। ফলে তাদের আটক বা টাকা উদ্ধার কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই দু’একজন বাংলাদেশি প্রতারকের জন্য বিদেশে যেমন দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়, তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও বিপাকে পড়েন। তবে ‘ইনফ্রাদ লিগ্যাল গ্রুপ’র আইনজীবি মুনা আল বাসরি কথা দিয়েছেন তিনি ওই বাংলাদেশিদের আইনি সেবাটি দেবেন।

এ ব্যাপারে দেশে ফিরে আসা রুবেলের মোবাইল ফোনে একাধিক বার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।