দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সন্তোষজনক, সংসদে অর্থমন্ত্রী

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান সন্তোষজনক দাবি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল চলমান অর্থ বছরে সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সংসদের বৈঠকে উপস্থাপন করা চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আয়, প্রবাসী আয় এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, ডিপির ব্যয়, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ইত্যাদি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান সন্তোষজনক। আমদানি-রপ্তানি আয় উভয় ক্ষেত্রেই ধনাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে উন্নত বিশ্বের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। তবে এসব বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হয়ে আসা এবং মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়ে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় বিগত অর্থ বছরে একই সময়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে বর্তমানে বিলাস দ্রব্যের আমদানি পরিহার করা এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে আমদানি ব্যয় কমেছে।

তিনি জানান, বিগত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের একই সময়ে আমদানি ঋণপত্র ৪.৫৭ শতাংশ কম খোলা হয়েছে। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০২১ এর ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের তুলনায় সেপ্টেম্বর ২০২২ সময়ে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০২১ এর ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশের তুলনায় সেপ্টেম্বর ২০২২ সময়ে ৯ দশমিক ১০ হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম কমতে থাকায় মূল্যস্ফীতির বর্তমান চাপ চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসার আশা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও খুব দ্রুত আগের মতো শক্ত অবস্থানে ফিরবে।

প্রতিবেদনে মন্ত্রী বলেন, কভিড পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালেও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী তেল, গ্যাসসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য এবং গম, ভোজ্যতেলসহ প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানাবিধ বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়।

চলতি অর্থবছর রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ হারে বাড়বে উল্লেখ করে মুস্তফা কামাল বলেন, আর্থিকখাতে খেলাপি ঋণের মাত্রা কমিয়ে আনাসহ আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা করা এবং কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর মাধ্যমে বিনিয়োগের গতিধারা সমুন্নত রাখতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।

তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্য আমদানির ওপর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন ব্যবস্থার কারণে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক হতে আমদানির পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পাবে। এতে চলতি হিসাবে ভারমাস্যের ঘাটতিও কমবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এতে আশাবাদী হওয়ার পূর্ণ সুযোগ আছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার জুলাই-প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং সরকারি ব্যয় বেড়েছে। রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে। চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে।

নিজেকে ‘অত্যন্ত আশাবাদী মানুষ’ হিসেবে তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের অর্থনীতির অন্তনির্হিত শক্তি, বিভিন্ন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অভিঘাতের প্রেক্ষিতে সরকারের নেওয়া বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে অর্থনীতির প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।