চৌগাছায় দুই দিনব্যাপী ব্যতিক্রমি খেঁজুর গুড়ের মেলা সমাপ্ত

যশোরের চৌগাছায় খেঁজুর রসের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে দুই দিনব্যাপী ব্যতিক্রমি ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা সমাপ্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারী) বিকেলে আলোচনা সভা শেষে পুরস্কার বিতরণীর পর মেলা শেষ হয়। ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা উপলক্ষে দুপুরে উপজেলা পরিষদ বৈশাখী মঞ্চে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) তমিজুল ইসলাম খান।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) হুসাইন শওকত, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কলাম লেখক মিজানুর রহমান মধু, চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান, চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ও চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ।

ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে বক্তব্য দেন এবং গাছিদের পক্ষে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন চৌগাছা সদর ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম।

আলোচনা সভা শেষে মেলায় অংশ নেয়া গাছিদের মধ্য থেকে ‘মানসম্পন্ন গুড় উৎপাদন প্রতিযোগিতা’য় বিজয়ী তিন গাছিকে যথাক্রমে দশ হাজার, সাত হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার, একটি করে ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ‘মানসম্মত গুড় উৎপাদন প্রতিযোগিতা’য় ধুলিয়ানি ইউনিয়নের কুষ্টিয়া-ফতেপুর গ্রামের কিসমত আলী প্রথম, পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের আব্দুল গাজী দ্বিতীয় এবং স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের হাসান আলী তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া আগের ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলার ১১ ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় সর্বোচ্চ খেঁজুর গাছ কাটা গাছিদের মধ্য থেকে ৩ জন করে ৩৬ জনকে পুরস্কৃত করা ছাড়াও উপজেলার প্রায় সাড়ে ছয়শত গাছিকে একটি করে কম্বল প্রদান করা হয়।

এছাড়াও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর রস ও গুড় নিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য রচনা ও দুই গ্রুপে কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যশোরের জেলা প্রশাসককে একটি রৌপ্যের তৈরি খেজুর গাছ এবং স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকতকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। অন্যদিকে এমন একটি ব্যতিক্রমী মেলার আয়োজন করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানাকে সম্মাননা পুরস্কার দিয়ে পুরস্কৃত করেন চৌগাছা পৌর মেয়র নূর উদ্দিন আল মামনু হিমেল।

এরআগে ১৬ জানুয়ারী সোমবার সকাল পৌনে দশটায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে দুই দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা’র উদ্বোধন করা হয়। দুই দিনের মেলায় প্রায় চারশ গাছি গুড়-পাটালি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন।

মেলা উপলক্ষে উপজেলার গাছি ছাড়াও দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের মধ্যেও এক প্রকার উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শতশত বছর ধরে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ খেঁজুর গুড় উৎপাদন হলেও এ পর্যন্ত এমন কোন মেলার আয়োজন করা হয়নি। তাদের দাবি, বর্তমান চৌগাছার সৃজনশীল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এখানে যোগদানের পর থেকে নানা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে নেন। তার সেই উদ্যোগের সাথে নতুন একটি সোপান ঐতিহ্যবাহী খেঁজুর গুড়ের মেলা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, মেলায় দুইদিনে চার শতাধিক গাছি গুড়-পাটালি বিক্রি করেছেন। দুইদিনে প্রায় পাঁচ হাজার কেজি গুড় বিক্রি করেছেন গাছিরা। এছাড়াও মোবাইলে অনেকেই হাজারের অধিক কেজি গুড়-পাটালির অর্ডার পেয়েছেন।

এ বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, চৌগাছার ইউএনও ইরুফা সুলতানার উদ্যোগে ‘খেঁজুর গুড়ের মেলা’ অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এবছরই আরো দুই একটি উপজেলায় এই মেলা করার। আগামীতে প্রতি বছর চৌগাছা ও যশোরে এই গুড়ের মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, খেঁজুর গুড়ের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সব রকমের উদ্যোগ নেয়া হবে। সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে খেঁজুর গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। যশোর জেলার এই ব্র্যান্ডিং পণ্যটি আগামীতে দেশে-বিদেশে আরো খ্যাতি অর্জন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে অবশ্যই ভেজাল মুক্ত রাখতে হবে।