যশোরে ১৪৪ ধারা অমান্য করে জমি দখলের চেস্টা

যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটির ছাতিয়ানতলা গ্রামে ১৪৪ ধারা অমান্য করে পৈত্রিক জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে একটি পরিবার। পরিবারটি আদালতে মুচলেকা দেওয়ার পরও ওই জমিতে থাকা বিভিন্ন ধরণের গাছ ও ফল কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে ভুক্তভোগী আব্দুল গফফারের অভিযোগ। তিনি জানান, জমি দখল, গাছ ও ফল কাটার প্রতিবাদ করায় তাদেরকে মারপিট ও হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে যশোর কোতয়ালি থানায় জিডি ও যশোর আদালতে মামলা করলেও কোন কিছুতেই তোয়াক্কা করছে না প্রতিপক্ষরা।
অভিযোগকারী আব্দুল গফফার জানান, ১৯৭৬ সালে তার পিতা বেচে থাকাকালীন পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ছাতিয়ানতলা গ্রামের ১৭নং মৌজার ৪৫৪ দাগে ৪৮ শতক জমি পায় সে। দীর্ঘ ৫৫ বছর যাবৎ জমি ভোগ দখল করে আসছিলো আব্দুল গফফার। ভোগ দখল করাকালীন ওই জমিতে গফফার নারিকেল, কাঠাল, আমড়া, লিচু, কলা, লেবু ও কড়াইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে। যার মূল্য বর্তমানে কয়েক লক্ষ টাকা। এসব রোপণকৃত গাছ ও জমির লোভ সামলাতে পারেনি প্রতিপক্ষ গফফারের চাচাতো ভাই মৃত আনতার আলীর ছেলে আশরাফ, হাফিজুর, ইনছার, আশরাফের ছেলে শাকিল, মনিরুজ্জামান ও চুড়ামনকাটি গ্রামের শামসুর রহমান। তারা প্রত্যেকে গফফারের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করার জন্য ২০২১ সালের ৪ জুন জমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ক্ষতি সাধন করাকালীণ গফফারের ছেলে গোলজার বাধা দেয়। এসময় প্রতিপক্ষ শাকিল গোলজারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
এ ঘটনায় গফফার বাদি হয়ে ৬ জুন যশোর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৮ জনকে আসামি করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এছাড়া শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে আব্দুল গফফার আদালতে ১৪৪ ধারা মামলা করেন। যার পিটিশন নং-৬৮৪/২১। এরপর তিনি আদালতে ১টি ১০৭ ধারার মামলাও করেন। যার পিটিশন নং-৪৩৩/২১। মামলা দুটির পরও আশরাফ গং গফফারের পরিবারকে অব্যাহত হুমকি দিলে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোর কোতয়ালি থানায় ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ও ২০২২ সালের ৪ মার্চ পৃথক দুুটি জিডি করেন গফফার।
এদিকে, জমির প্রকৃত মালিক যাচায়ের জন্য আদালত নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট এসিল্যান্ড যশোর কোতয়ালি থানা বরাবর চিঠি প্রদান করেন। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড ও কোতয়ালি থানা ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকৃত মালিকের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। যার স্মারক নং এসিল্যান্ড -১২৪৩ তাং ১০/০৯/২০২১ এবং কোতয়ালি থানা স্মারক নং-৮৫৫১ তাং ১৭/০৯/২০২১। প্রতিবেদনে বিবাদিদের জমির কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু ধুরন্ধাজ আশরাফ গং আদালতে কাগজপত্র দাখিল করাতো দূরের কথা হাজিরাও দেন নাই। ফলে, আদালত তাদের ওপর সমন জারী করেন।
এরপর প্রায় ১ বছর পর ২০২২ সালের ২৩ আগষ্ট গফফারের দায়ের করা ১০৭ ধারার মামলায় হাজিরা দিয়ে পুনরায় এধরণের ঘটনা ঘটাবে না মর্মে অঙ্গিকার করে আশরাফ গং ১ বছরের মুচলেকা দিয়ে আসে। গফফার জানান, মুচলেকার ১ দিন পর ২৫ আগষ্ট আশরাফসহ মনিরুজ্জামান, শাকিল ও ইনছান বেআইনি ভাবে গফফারের জমিতে গিয়ে কাঠাল ও কলা গাছ কেটে ক্ষতি সাধন করে।
এ ব্যাপারে গফফার জানান, সে যশোর গণপূর্ত বিভাগের প্রধান সহকারী থাকাবস্থায় ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবরে অবসরে যান। ২০১৯ সালে তিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া তার ছেলেরা চাকরীর সুবাদে বাইরে থাকায় প্রতিপক্ষরা তার জমিটি জোর পূর্বক দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। যা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। তার পৈত্রিক সম্পত্তিটি যেন প্রতিপক্ষরা অবৈধ ভাবে দখল করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ আশরাফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আব্দুল গফফারের সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। বিষয়টি নিয়ে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শালিস করলেও তিনি মানতে চাননি।