পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: ৬ মামলায় গ্রেপ্তার ৮১

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে পুলিশ-মুসল্লিদের সংঘর্ষ এবং গুজব ছড়িয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় ছয়টি পৃথক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সোমবার (৬ মার্চ) সকাল পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, চারজন উপ-পরিদর্শক, ওসমান আলী নামের এক ব্যক্তি এবং একজন র‌্যাবের কর্মকর্তা বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাগুলো করেন। এসব মামলায় নাম না জানা আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার মানুষকে।

এর আগে, গত শুক্রবার (৩ মার্চ) আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) বার্ষিক সালানা জলসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় ওঠে পঞ্চগড়। জুমার নামাজের পর আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করা হয়।

সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের ডাকে ওই বিক্ষোভ মিছিলগুলো পঞ্চগড়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌড়ঙ্গী মোড়ের দিকে আসতে থাকে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের ওপর হামলা করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে মুসল্লিরা। এসময় পুলিশও টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের কয়েকটি অংশ জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা পুলিশ ও বিজিবির গাড়ি ভাঙচুর, ট্রাফিক পুলিশের অফিসে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া আরেকটি অংশ পঞ্চগড় বাজারে আহমদিয়াদের চারটি দোকানের মালামাল বের করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া তাদের বেশকিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

এঘটনায় কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন এবং মুসল্লিদের মধ্যে একজন নিহত হন। পরে রাত ৯টার দিকে জলসা স্থগিত ঘোষণা করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

এদিকে, গত শনিবার সন্ধার পর আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পঞ্চগড় শহর। ‘আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা দুই জনকে গলা কেটে হত্যা করেছে’- এমন গুজবে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে তারা দুইভাগ হয়ে আহমদনগর ও তুলারডাঙ্গা এলাকার দিকে ছুটতে থাকেন। এ সময় পঞ্চগড় বাজারের কদমতলা এলাকার ওয়াকার শোরুম নামে একটি জুতার দোকানের সাটার ভেঙে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় একদল মানুষ। এর মধ্যে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয় জনতা।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস. এম সিরাজুল হুদা বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে ঘটনায় ৬টি মামলা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।