পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: হত্যাসহ ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ১৩০

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায় ও পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় এবং গুজব ছড়িয়ে আবারও হামলার ঘটনায় দশটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে ৮১ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এসব মামলায় ২৭ জনের নামসহ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও প্রায় সাড়ে ৬ হাজার জনকে। মঙ্গলবার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।

পুলিশ জানায়, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, তাদের আটটি দোকানে লুটপাট, গুজব ছড়িয়ে আবারও হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ পর্যন্ত দশটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ১৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার রাতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নিহত জাহিদ হাসানকে হত্যার অভিযোগে ওসমান আলী বাদী হয়ে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাত ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হলেও কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে হামলা, ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাদানসহ একাধিক অভিযোগে পুলিশের করা বিভিন্ন মামলায় ১২ জনের নামসহ তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মোটরসাইকেল চালিয়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশের করা আরেকটি মামলায় ১৫ জনের নামসহ দুই হাজার ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে মামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তার আতঙ্কে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ বিএনপির।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের যুবক জাহিদ হাসানকে হত্যার অভিযোগে শহরের রাজনগর এলাকার ইসমাইল হোসেন ঝনু (২৫) এবং তুলারডাঙ্গা মহল্লার রাসেল হোসেনকে (২৮) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আর মোটরসাইল চালিয়ে এবং ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে পঞ্চগড় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি (২৯) এবং রাব্বী ইমনকে (২৬) গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এসব মামলায় সোমবার পর্যন্ত গেপ্তার ৮১ জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত নেতারাও রয়েছেন বলে পুলিশ জানায়।

অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, শুক্রবারের সালানা জলসার প্রতিবাদে একদিন আগে বৃহষ্পতিবার বিক্ষোভ করেছিলেন সাধারণ মুসল্লিরা। এ নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। তারা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কঠোর ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। এখন ঢালাওভাবে পাঁচ উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’

জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বাসায় তল্লাশির নামে নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। এরা সবাই নিরপরাধ, কোনোভাবেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সিসি টিভি এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখলে তা স্পস্ট হয়ে যাবে। অথচ রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদসহ গ্রেপ্তাকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।’

পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আইন ও ধারায় মোট দশটি মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত আরও ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা ১৩০ জন। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা তদন্তের মাধ্যমে, ভিডিও ফুটেজ দেখে, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে অপরাধে জড়িতদে গ্রেপ্তার করছি।’

তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুইজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহিদ হাসানকে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। বর্তমানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা ঘটনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িতদেরই গ্রেপ্তার করছি। এখানে কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানির সুযোগ নেই। তবে হামলাকারীরা যেই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।