সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে আবারও তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ে নিজেদের আরও শক্তিশালী ও সুসংহত করতে চায় দলটি। এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার আগে তৃণমূল পর্যায়ে ইস্যুভিত্তিক আরও ধারাবাহিক কর্মসূচি দেবে বিরোধী দলটি। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি দাবির সপক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও নিজেদের শক্তি জানান দিতে চায় দলটির হাইকমান্ড। লক্ষ্য অর্জনে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি আরও কিছুদিন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো। একেবারে তৃণমূল থেকে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গণঅবস্থান, গণসমাবেশ, সমাবেশ, পথযাত্রার মতো কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বড় সমাবেশ’ করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী আট মাস পর, অর্থাৎ ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। সে অনুযায়ী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনের তপশিল। তপশিলের আগের চার মাসের মধ্যেই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে চায় টানা ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। সে লক্ষ্যে আগামী দু-তিন মাসে তৃণমূল থেকে আন্দোলনের ঢেউ তুলতে চায় তারা। তারপর ঢাকাসহ সারাদেশের রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে একই ইস্যুতে আন্দোলনে ব্যর্থ বিরোধী দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমকালকে বলেন, তাঁদের আন্দোলনটা বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য নয়। দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার ফিরে পেতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনে যেমন বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের নেতাকর্মী রাজপথে আছেন, তেমনি সাধারণ মানুষও আছেন। আগামীতে জনগণের সম্পৃক্ততা আরও বেশি বাড়াতে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁদের সমর্থনেই চলমান আন্দোলন সফল হবে বলে জানান তিনি।
গত জুলাই থেকে সরকারের পদত্যাগ দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। ওই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭ নেতাকর্মী নিহত ও অসংখ্য আহত হন। কারাগারেও যেতে হয়েছে উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীকে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মী হত্যার প্রতিবাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ধারাবাহিক ওই আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করে দলটি। সরকারের বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে এসব সমাবেশ সফল করলেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বাহ্যিকভাবে অনেকটা ব্যাকফুটে যায় দলটি।
দলটির নেতাদের মতে, সারাদেশে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে যেভাবে তাঁরা গণজাগরণ সৃষ্টি এবং জনসম্পৃক্ততা ঘটাতে পেরেছিলেন, তাতে অনেকটাই ছেদ ঘটে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায়। যদিও এর পরে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন তাঁরা। কিন্তু সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের জন্য তাঁদের আবারও জনমত তৈরির কর্মসূচিতে যেতে হবে। জনগণকে মাঠে নামাতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল আর বুদ্ধিজীবীদের সক্রিয় করতে হবে। এ লক্ষ্যে আবারও একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করতে চাইছেন বিএনপির হাইকমান্ড।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রমজান মাসেও কর্মসূচির মাধ্যমে সক্রিয় অবস্থান ধরে রাখে দলটি। সারাদেশে ইউনিয়ন থেকে শুরু করে থানা-উপজেলা. জেলা পর্যায়ে গণঅবস্থান, মানববন্ধন, প্রচারপত্র বিলির মতো কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মী। এর বাইরে সারাদেশে শতাধিক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচারসহ অন্যান্য অসংগতি তুলে ধরে দলটি। ইফতারে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও পেশাজীবী, সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। এ ছাড়া গুম, খুন আর নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচিও গ্রহণ করে দলটি। কারাগারে আটক নেতাকর্মীকে সাহস জোগাতে কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটে যান তাঁদের বাড়ি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার পৌঁছে দেন তাঁরা। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীর মনোবল আরও সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নেয় দলটি।