ক্যাডার, নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস)। ৫৬টি পদ নিয়ে চলছে টানাটানি। একপক্ষ বলছে এগুলো নন-শিডিউলভুক্ত,অন্যপক্ষের দাবি এগুলো শিডিউলভুক্ত পদ। অধিকার আদায়ে রিট পর্যন্ত করেছেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা। পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ায় তাদের মধ্যেই অসন্তোষ বিরাজ করছে বেশি।
ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, নন-শিডিউল পদ বলতে কোনো কথা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমবেশি উভয় গ্রুপের মধ্যে হতাশা থাকলেও নন-ক্যাডাররা বেশি বঞ্চিত হচ্ছেন। যুগের পর যুগ পদোন্নতিবঞ্চিত থাকায় সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। তবে নিয়োগ ও পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। এদিকে বিবিএস’র অর্গানোগ্রাম সংস্কার করতে সম্প্রতি গঠন করা হয়েছে একটি উপকমিটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন শনিবার বলেন, ক্যাডার, নন-ক্যাডার সুসমন্বিত নীতিমালার অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এটি শুধু বিবিএসের মধ্যেই নয়, সরকারের অন্যান্য অধিদপ্তরেও আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি উত্তরণের। এজন্য সরকারের নীতিমালা দরকার।
একবারেই যে সমস্যার সমাধান করা যাবে এটা বলা যায় না। তিনি আরও জানান, বিবিএস অর্গানোগ্রাম ঠিক করতে একটি উপকমিটি কাজ করছে। যতটুকু জেনেছি তারা কাজ করছেন, তবে এখনও আমার (সচিবের) সঙ্গে বৈঠক করার মতো অবস্থায় আসতে পারেনি।
সূত্র জানায়, বিবিএসের অর্গানোগ্রাম ঠিকঠাক করতে সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব ড. মাঈনুল হাসান আসনারীকে প্রধান করে একটি উপকমিঠি গঠন করেছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এ কমিটির সদস্য বিবিএস’র উপমহাপরিচালক পরিমল চন্দ্র বসু যুগান্তরকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই ৩টি বৈঠক করেছি। এটি একটি জঠিল প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিনের সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে এটা ভাবা যায় না।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের দাবি হচ্ছে, পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র বৈষম্য বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান কর্মকর্তার ৭০টি ক্যাডার পদের বিপরীতে ৭৬টি উপপরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৫০টি পদ ক্যাডার নয়। অন্যদিকে নন-ক্যাডার ১৫টি উপপরিচালক পদের বিপরীতে রয়েছেন ২৩৫ জন পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, ২ জন কার্টোগ্রাফার, ১ জন প্রকাশনা কর্মকর্তা (মোট ২৩৮টি ফিডার পদ)। ২০১১ সালের আগে ৩৫টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার (নন-ক্যাডার) বিপরীতে উপপরিচালক পদ ছিল ১৫টি এবং ক্যাডার ৭০টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার বিপরীতে উপপরিচালক পদ ছিল ২৬টি।
২০১১ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০০টি পরিসংখ্যান কর্মকর্তার (নন-ক্যাডার) পদ সৃজন করে। একই সঙ্গে এসব পদের বিপরীতে ৫০টি উপপরিচালক, ৫টি যুগ্মপরিচালক এবং ১টি পরিচালক পদও নতুন করে সৃষ্টি করা হয়। তবে পদগুলো ক্যাডার বা নন-ক্যাডার এ সংক্রান্ত কিছু উল্লেখ করা হয়নি। ফলে পরে এগুলো ক্যাডারভুক্ত করতে বিবিএস থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়। তখন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনুবিভাগ এতে অসম্মতি জানায়। এ অবস্থায় তথ্য গোপন করে ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা এসব পদ ক্যাডার পদ হিসাবে সৃজন করে। কিন্তু শিডিউলভুক্ত হয়নি।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ পদগুলোকে ক্যাডার পদ হিসাবে আদেশ জারি করার পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৫৬টি পদকে ক্যাডার হিসাবে সৃজিত নয় মর্মে শিডিউলভুক্তিতে আপত্তি জানায়। এদিকে নতুন সৃজিত নন-ক্যাডার পদগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ না থাকাতে তারা বঞ্চণার শিকার হচ্ছেন।
বঞ্চিত নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করেন গত বছরে। সম্প্রতি বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর দ্বৈত বেঞ্চ বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন করে পদোন্নতির কথা লিখে নির্দেশনা প্রদান করে রায় ঘোষণা করেছেন। উক্ত রিট সম্পর্কে একজন কর্মকর্তা জানান, ‘এখন মহামান্য হাইকোর্ট আইন অনুসরণ করার জন্য রায় ঘোষণা করেছেন। আমরা প্রত্যাশা রাখি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করবেন।’
এদিকে পরিসংখ্যান ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৩ ক্যাটাগরির মোট ৫৬টি ক্যাডার পদ সব আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে ২০১৪ সালে সৃজন করেছে। উক্ত পদসমূহে ইতঃপূর্বে যথাক্রমে ১৮, ২০, ২৪, ২৫, ২৭, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ে সরকার যথানিয়মে পদোন্নতি দিয়েছে। বর্ণিত ৩ ক্যাটাগরির পদ বিসিএস (পরিসংখ্যান) ক্যাডার শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তবে শিডিউল অনুযায়ী সময়ে সময়ে ক্যাডার পদের সংখ্যা হ্রাস/বৃদ্ধি হতে পারে। এক্ষেত্রে ৫৬টি ক্যাডার পদসহ শিডিউল পদসংখ্যা হালনাগাদ করার রুটিন কাজটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো করেনি। একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ক্যাডার শিডিউলে পদসংখ্যা হালনাগাদ করার সঙ্গে পদোন্নতির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত এনএসডিএস দলিল অনুযায়ী বিবিএসে নন-ক্যাডার পদ ও কর্মকর্তা ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে একটি ধারা তৈরির মাধ্যমে সব দ্বন্দ্ব ও সমস্যার সমাধান সম্ভব-যা খুবই জরুরি। তাহলে বিবিএসে সুন্দর কর্মপরিবেশ সৃষ্টি হবে। আমরা কোনো প্রকার নোংরামি ও দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকতে চাই না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানকে শনিবার বলেন, বিবিএসে ক্যাডার নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব আছে। এটা অস্বীকারে সুযোগ নেই। সুযোগ সীমিত থাকায় যুগের পর যুগ নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাচ্ছেন না। ফলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। নিয়োগ পদোন্নতির জটিলতার কারণে পরিসংখ্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই দুটি ধারা অব্যাহত থাকায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে উদ্যোগী হয়ে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।