অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করতেই সহিংসতা

gov logo

অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিএনপি সহিংসতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সরকার। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সহিংস ঘটনার বর্ণনা সংবলিত এক নোটে সরকারের তরফে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে সরকার সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দেবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবারই নোট প্রস্তুত করে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোয় পাঠিয়ে দিয়েছে। ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসেও এটি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের পুরো পরিস্থিতি অবহিত করতে ব্রিফিং করা হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোটের একটি কপি যুগান্তরের হাতে পৌঁছেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মহাসমাবেশের নামে সহিংসতা, ভাঙচুর এবং আগ্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অসাংবিধানিক দাবিতে এই মহাসমাবেশ আহ্বান করে।

বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। একই দিনে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করে শাসক দল আওয়ামী লীগ। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ডিএমপি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ হিসাবে কতিপয় শর্ত আরোপ করে উভয় দলকে সমাবেশের অনুমতি দেয়।

এসব শর্ত হলো : নির্ধারিত স্থানে বেলা ২টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করা, দুপুর ১২টার আগে সমাবেশস্থলে লোকসমাগম না করা, কোনো উসকানিমূলক কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য না দেওয়া, লাঠি কিংবা ধাতব রড বহন না করা, দণ্ডিত কারও বক্তব্য প্রচার না করা। ডিএমপি এসব শর্ত আরোপের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো দলের জন্যই বৈষম্য করেনি। শর্তগুলো উভয় দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।

নোটে আরও বলা হয়, জানমাল রক্ষায় ডিএমপি আরোপিত আইনগত শর্তগুলো বিএনপি কর্মীরা লঙ্ঘন করেন। তারা হামলা চালিয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবন এবং জাজেস টাওয়ার (সুপ্রিমকোর্টের অন্য বিচারকদের বাসভবন) ভাঙচুর করে। তারা রমনা ট্রাফিক পুলিশের দপ্তর এবং কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল ও মালিবাগ এলাকার পুলিশ আউটপোস্টে অগ্নিসংযোগ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা বিনষ্ট করে। দৈনিক বাংলার কাছে একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স এবং সরকারি গাড়ি পোড়ানোর কারণে জরুরি মেডিকেল সার্ভিস ব্যাহত হয়।

সরকারের তথ্য নোটে আরও বলা হয়, বিএনপি কর্মীরা গণপরিবহণে নির্দয়ভাবে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ফলে যাত্রীরা গুরুতর আহত হন এবং গাড়ির ক্ষতিসাধিত হয়। তারা ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং বেইলি রোডে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। নয়াপল্টন থেকে কাকরাইল পর্যন্ত বহু প্রতিষ্ঠান এবং অডিট কমপ্লেক্সের সামনে অনেক গাড়িতে আগুন দিয়েছে। তারা পুলিশের দিকে অপরিশোধিত বোমা, হাত বোমা এবং ইটের টুকরো নিক্ষেপ করে। তাদের হামলায় কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড়, পল্টন, মালিবাগ ইত্যাদি স্থানে শত শত পুলিশ ও সাধারণ মানুষ আহত হন।

এতে বলা হয়, এসব সহিংসতা প্রকাশ্যে ঘটেছে। প্রিন্ট ও মিডিয়ার সাংবাদিকরা তা কাভার করেছেন। নৃশংসতার ভয়াবহতা সংবলিত অনেক ফটো ও ভিডিও রেকর্ড সামাজিক মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে রয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল বিএনপি কর্মীরা কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জাম ভাঙচুর ও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিএনপি কর্মীদের বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল জার্নালিস্টস ইউনিয়ন (বিএফইউজে) তাৎক্ষণিকভাবে বিবৃতি দিয়েছে।

সরকারের নোটে আরও বলা হয়, ঢাকায় আরেকটি সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হওয়ায় ডিএমপি তাদের আবেদন মঞ্জুর করেনি। খুব সকালে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা মতিঝিলের আরামবাগ এলাকায় জড়ো হয়েছিল। তাদের কেউ কেউ গোলাপবাগ দিয়ে শাপলা চত্বরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

আরও বলা হয়, সহিংসতার লক্ষ্যে বিএনপি ২৯ অক্টোবর ঢাকা শহরে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে। সরকার পরিস্থিতির বিষয়ে সতর্ক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং জনগণের জানমাল রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও বিএনপি ও তার জোট বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নিরীহ মানুষ, মিডিয়ার পেশাজীবী, ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ওপর হামলা চালিয়েছিল। তখনও অনেকে মারা যান। জীবন্ত যাত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়। বিএনপি প্রত্যেক নির্বাচনের আগে সন্ত্রাস চালানোর একটা অভ্যাস রপ্ত করেছে। তাদের উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা এবং অগণতান্ত্রিক শক্তিকে উৎসাহিত করা। তবে বরাবরের মতো সরকার শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম দেখাবে।