নিজেরা করে দোষ চাপানোর পুরোনো খেলায় মেতেছে সরকার: রিজভী

নিজেরা ভাঙচুর-হামলা-অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর পুরোনো খেলায় মেতেছে সরকার। এ অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি দাবি করেছেন, গত শনিবার মহাসমাদেশের দিন বিনা উস্কানিতে পুলিশ-র্যাব-বিজিবি তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জ করেছে। সরকারের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সংঘটিত এ যৌথ হামলায় নির্বাচারে আঘাত ও আহত করা হয় বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের।

আওয়ামী লীগের চিরন্তন যে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক বৈশিষ্ট, সেই ধারাবাহিকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের অংশগ্রহণে সরকারি স্থাপনা ও বেসামরিক যানবাহনে নিজেরা হামলা করে ও পুড়িয়ে দিয়ে বিএনপির ওপর দোষ ও মামলা চাপানোর অপপ্রয়াসে আবারো লিপ্ত হয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যে ওই দিনের (মহাসমাবেশ) বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে যে, কিভাবে পুলিশের পোশাক পরিহিত ব্যক্তিরা, কিংবা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতে বাস পোড়ানোর একাধিক ঘটনা। স্বীকারোক্তি দিয়েছে পুড়িয়ে যাওয়া যানবাহনের ড্রাইভার ও হেলপাররা। সোমবার বিকালে জুমে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা আরও অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, মহাসমাবেশের দিন রাইদা বাস থেকে পুলিশ প্রটেকশনে লঠিসোটা নিয়ে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমন ও ভাঙচুর করতে। যারা গেটে ভাঙচুর করেছে, তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আক্রমণ করে পূর্বনিয়োজিত সন্ত্রাসীরা। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, বাস, মোটরসাইকেলসহ বেশ কটি গাড়িতে আগুন দেয় তারা। হামলা করে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে। এছাড়া কাকরাইল, ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড় ও শান্তিনগর এলাকার কয়েকটি পুলিশ বক্স তারা পুড়িয়ে দেয়। অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, যাদের মানবতা লঙ্ঘনের ইতিবৃত্ত আজ সারা বিশ্বে সমালোচিত, সেই পুলিশের অজস্র সদস্যের উপস্থিতিতে দিনের আলোয় তাদেরই প্রধান কার্যালয়ের হাসপাতাল বা অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে গুটিকয়েক বিএনপির কর্মী, ভেঙেছে পুলিশ বক্স- এই বয়ানটি আষাঢ়ে গল্প হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশবাসী তথা সংশ্লিষ্ট সব মহল।

দেশে টার্গেট কিলিং শুরু করেছে সরকার- এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, মনে হচ্ছে কিছু ঘটনায় কোন টার্গেট কিলিং করা হচ্ছে। আবারও সেই পুরো ঘটনা টার্গেট কিলিং শুরু হয়েছে। রাজশাহীতে দুজন চিকিৎসক এক রাতে নিহত হয়েছে। তারা একটি রাজনৈতিক সংগঠনের এলাকার নেতা। কুমল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দলের জাকির হোসেনকে পুলিশ ধাওয়া করে। পরে তার লাশ পাওয়া যায়। এ বিষয়টি খুব উদ্বেগের, সরকারের এটি একটি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিকল্পনা করে এটি করা হচ্ছে। গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিতে এই পন্থা অবলম্বন করেছে সরকার।

মহাসমাবেশের দিন ঘটনার বিবরন তুলে ধরে রিজভী বলেন, পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী কাকরাইল মোড়ের কাছে আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসী বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বানচাল করে পুলিশী হামলাকে বৈধতা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সহিংস আচরণ শুরু করে। আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সংলগ্ন একটি গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা পুলিশকে লক্ষ করেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে পুলিশ বাহিনীর পেশাদারি ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখা দরকার, সেখানে পুলিশ নিজেই আক্রমণাত্মক হয়ে মাত্রাতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করা শুরু করে। যেখানে মূল জনসভার কেউ এই সহিংস ঘটনায় যুক্ত ছিলো না, সেখানে পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ পূর্ব-পরিকল্পনামাফিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হামলা শুরু করে। পুলিশের লাঠি-চার্জ, রাবার-বুলেট নিক্ষেপ ও সাউন্ড গ্রেনেডে শত শত নিরস্ত্র নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণ আহত হন।

তিনি বলেন, ন্যক্কারজনক পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই হামলা চালানো হয় সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীদের গাড়িতে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর সফলতা আঁচ করতে পেরে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির বিপক্ষে গণমাধ্যম ও বিচারবিভাগকে মুখোমুখি করাতেই এই সহিংসতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে আওয়ামী লীগ কর্তৃত্ববাদী সরকার ও তাদের পুলিশ বাহিনী। দেশবাসী তথা বিশ্ববাসী বিস্ময় ও ক্ষোভের সাথে প্রত্যক্ষ করেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ, যেখানে লাখ লাখ মানুষ ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন সেখানে অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকার কি নৃশংস তাণ্ডব চালিয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রকৃতপক্ষে ঘটে যাওয়া প্রতিটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার স্থল ছিল মূল মহাসমাবেশ তথা পল্টন থেকে দূরে। সেখানে আমাদের কোনো কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতি বা দলীয় অবস্থানের প্রশ্নই উঠে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একই সময় একটি তথাকথিত সমাবেশ করে নয়াপল্টন থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে। তাদের প্রায় সব নেতাকর্মীর হাতে লাঠি ছিল, যা ব্যবহার করা হয়েছিল সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ওপরে এবং সেই অনাচারের দায়ই বিএনপির ওপর চাপানো হয়েছে।

রিজভী আরও বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের অনুমতি দিলেও ভেতরে ভেতরে এঁটেছিল সর্বনাশা হামলার পরিকল্পিত নীলনকশা। সংবাদমাধ্যমের সংবাদ থেকে নানা ঘটনায় মনে হয় সরকারের এজেন্টরা দেশের বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মন্দিরে নাশকতা করে দোষ চাপানোর চক্রান্ত করতে পারে। এ বিষয়ে বিএনপি ও এর সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, চক্রান্তকারী নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকারের পতন অত্যাসন্ন। গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলন, মামলা, হামলা ও গ্রেফতার দিয়ে কখনই থামানো যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।