বিষয়খালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক বাহিনীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ দিবস ১ এপ্রিল

১ এপ্রিল ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীদের সাথে ঝিনাইদহ জেলার বিষয়খালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। দখলদার বাহিনী সংবাদ পায় ঝিনাইদহের মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে আক্রমন করার জন্য বিষয়খালী বাজারের বেগবতী নদীর তীরে সংগঠিত হচ্ছে। ১ এপ্রিলের এই দিনে পাকবাহিনী যশোর ক্যান্টমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসতে থাকে। এ আক্রমণের খবর জেলার মুক্তিযোদ্ধারা পেয়ে যান। তারা যুদ্ধের অন্যতম স্থান হিসেবে বেছে নেন বিষয়খালীর বেগবতী নদীর তীরে তাদেরকে প্রবল বাঁধার সৃষ্টি করে। পাকবাহিনীকে রুখতে নদীর তীরের সেতু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় ৮ ঘন্টা তুমুল যুদ্ধ হয়। নদীর তীরের সম্মুখ যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে পাকহানাদার বাহিনী ফিরে যায় যশোর ক্যান্টমেন্ট অভিমুখে।

যাবার পথে পাকহানাদার বাহিনী চালালো বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ। আর সেই হত্যাযজ্ঞে শহীদ হলেন বিষয়খালী হাইস্কুলের ৭ম শ্রেণীর তরুন মেধাবী ছাত্র গোলাম মোস্তফা।

এছাড়াও যারা শহীদ হলেন বুদ্ধিজীবী মায়াময় ব্যানার্জী, নূরুল ইসলাম মুন্সী, কাশেম আলী, শামছদ্দীন, জাহানারা বেগম, সিদ্দীকুর রহমান, আঃ জব্বার, সিরাজ মিয়া, মতিয়ার রহমান, আদ্যনাথ অধিকারী, সৈয়দ আলী, হামিদ আলী খা, জিতেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, আব্দুল হোসেন, গোকুল চন্দ্র, সুধির চন্দ্র সুত্রধর, আদ্যনাথ সাখারী, অনাথ বাগচী, নারায়ণ চন্দ্র বিশ্বাস, আইয়ুব মিয়া, দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, ভূষণ বাবু, নলিনী গোসাই, দীনেন্দ্র নাথ ব্যানার্জী, উকিল উদ্দিন, দুঃখু মিয়া, সদর উদ্দীন, দুখী মাহমুদ, আব্দুল কুদ্দুস, খলিলুর রহমান, কাজী নজির উদ্দিন, শমসের আলী ও বিষয়খালী গ্রামের কৃতি সন্তান মাহাতাব মুনিরসহ অসংখ্যা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে তাদের প্রাণকে উৎসর্গ করলেন।

আর তাইতো ঝিনাইদহের অমিততেজী দামাল তরুন দল বাংলাদেশের ইতিহাসের যুদ্ধ বিজয়ের গৌরবের প্রথম মাইল ফলক স্থাপন করলো এই বিষয়খালী যুদ্ধে। এই যুদ্ধের কাহিনী প্রথমে বিবিসি, ফরাসী বার্তা সংস্থা ও অষ্ট্রেলিয়া রেডিও এবিসিতে প্রচারিত হয়। এই সম্মুখ যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ছিলেন যশোর সেনানিবাসের বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক এবং ইপিআর এর জোয়ানরা, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের হাবিলদারাসহ স্থানীয় বিষয়খালী গ্রামের সংগ্রামী জনতা। এই দিনটি প্রতিবছর বিষয়খালী তথা ঝিনাইদহবাসী পালন করে আসছে। বিষয়খালী শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও “প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ” নামের মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কার্য।

অভিযোগ আছে বিষয়খালী যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান না। তালিকায়ও তাদের নাম নেই।