ব্যারিস্টার খোকনকে বহিষ্কারের আলোচনা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামে

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নিষেধ সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন ফোরামের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। ফোরামের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় খোকনকে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এই সংগঠন থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে। গত শনিবার অনুষ্ঠিত ফোরামের বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তবে ব্যারিস্টার খোকনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর ছেড়ে দেন ফোরাম নেতারা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের প্যানেল নীল দল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে খোকনসহ নির্বাচিত চার আইনজীবীকে দায়িত্ব না নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে। তবে ফোরামের ‘না’ সত্ত্বেও গত ৪ এপ্রিল বার সভাপতির দায়িত্ব নেন ব্যারিস্টার খোকন। এতে ক্ষুব্ধ হয় আইনজীবী ফোরাম।

শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বৈঠক হয়। এতে ব্যারিস্টার খোকনসহ চার আইনজীবীর দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতারা। ফোরাম নেতাদের অনেকেই বলেন, আমাদের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত হয়ে কারচুপির নির্বাচনের ফল মেনে নিয়ে খোকন দায়িত্ব নিয়েছেন; যেটি তিনি মোটেও ভালো করেননি। ফোরামে তাকে বহিষ্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত চেয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, গত শনিবার গুলশান কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের বৈঠক হয়। বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট বারসহ দেশের বিভিন্ন বারে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বার নির্বাচিনে নজিরবিহীন অনিয়ম ও ভোটে কারচুপিসহ এই বৈঠকে আরও বহু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন বারে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনসহ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম শক্তিশালী করা নিয়ে আলোচনা হয়। এসব বিষয়ে ফোরামের পরবর্তী সভায় বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ব্যারিস্টার খোকনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফোরামের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে ওইদিন আলোচনা হয়েছে। সব বিষয় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে নির্বাচন করতে বলেছেন, আমি তার নির্দেশে নির্বাচন করেছি। আইনজীবীদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। এখানে শপথ নেওয়ার কিছু নেই। ৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে আমি এই দায়িত্বে আছি।

আইনজীবী ফোরামের সভায় ছিলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনি এলাকায় ছিলাম। তাই বৈঠকে থাকতে পারিনি।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ব্যারিস্টার খোকন ছাড়াও মো. শফিকুল ইসলাম, মিসেস ফাতিমা আক্তার ও সৈয়দ ফজলে এলাহী অভিকে দায়িত্বভার না নিতে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। চিঠিতে সই করেন ফোরামের সভাপতি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী এবং মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। ওই চিঠির অনুলিপি দলটির মহাসচিব ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের (দপ্তরের দায়িত্বে নিয়োজিত) কাছে পাঠানো হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিগত ৬ ও ৭ মার্চ ২০২৪ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আপনারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মনোনীত প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিগত দু’বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দু’জন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মন্জুরুল হককে তথাকথিত বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে ৮/০৩/২০২৪ প্রত্যূষে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদেরকে মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়।’