ঝিনাইদহের দুইটি উপজেলায় ১০ প্রার্থীই আওয়ামীলীগের “যোগ্য প্রার্থী” সংকট দেখছেন ভোটাররা

প্রথম ধাপে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এ ঝিনাইদহের দুইটি উপজেলায় সরকার সমর্থক ছাড়া বিরোধী শিবিরের কোন প্রার্থী নেই। বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগের জোটভুক্ত কোন শরীক দলও এই নির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচন হয়ে উঠছে নিরুত্তাপ। তাছাড়া ব্যাক্তিত্ববান কোন রাজনৈতিক নেতা এই নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ায় “যোগ্য প্রার্থী” সংকট দেখছেন ভোটাররা। শহর বা হাটে বাজারে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। ঢিলেঢালা প্রচারণার পাশাপাশি প্রচন্ড তাপদাহে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী আমেজ জমতে দেরি হচ্ছে। এদিকে প্রার্থী তালিকা চুড়ান্ত ও প্রতিক হাতে পেয়ে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা শহর অঞ্চলে পোস্টার ও ব্যানার টাঙ্গিয়ে প্রচারনায় নেমেছেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও নৌকা প্রতিক না থাকলেও মুলতঃ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রবিন নেতা জে এম রশীদুল আলম, দলের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মাসুম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ছরওয়ার খাঁন সউদ, যুবলীগ নেতা নুর এ আলম বিপ্লব ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এস এম আনিচুর রহমান খোকা প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জামায়াত নেতা ড. হাবিবুর রহমান প্রার্থী হলেও তিনি দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এই নির্বাচনে জাসদ, বাসদ, কল্যান পার্টি, জেপি, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কাস পার্টিসহ আওয়ামী লীগের শরীক দলগুলো কোন প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের প্রতিযোগিতা ক্ষিন হয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে দলের মধ্যে এই ভোট নিয়ে ক্রমশ বিভেদ ও গ্রুপিং সৃষ্টি হচ্ছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১’শ ৬৫টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৯’শ ২৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৫ হাজার ৪’শ ৬ জন। মহিলা ভোটার রয়েছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৫’শ ১৯ জন।

অপরদিকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনেও সরকারের শরীক বা সরকার বিরোধী কোন দল অংশ গ্রহন করেনি। ফলে নিজ দলের প্রার্থীরাই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন থেকে ইতিমধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু সরে দাড়িয়েছেন। ফলে সেখানকার ভোটও নিরুত্তাপ হয়ে উঠেছে। কালীগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান মতি, কাস্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমশের ও জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের কোন প্রার্থী না থাকায় ভোটাররদের মাঝেও কোন উৎসবের আমেজ নেই। ভোটারদের ভাষ্য অংশগ্রহন মুলক ও শক্ত প্রতিদ্বন্দি না থাকলে নির্বাচন জমে না। কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯১টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯’শ ২৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২৪ হাজার ৩২৮ জন। মহিলা ভোটার রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৫’শ ৫৩ জন।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সদর উপজেলার আঠারো মাইল বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, ভোট আসলে আগে গ্রামে গ্রামে পাড়া মহল্লায় একটা আমেজ তৈরী হতো। কিন্তু এখন তা নেই। এই উপজেলা নির্বাচনেও চোখে পড়ছে না। সাধুহাটী ইউনিয়নের টোকনুজ্জামান জানান, নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে ২/১ জনকে মানুষ চেনে। বাকীদের কোনদিন দেখেনি। প্রার্থীদের বেশির ভাগই রাজনৈতিক পরিচয় ও ব্যক্তিত্ববান নয় বলেও তিনি দাবী করেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ছরওয়ার খাঁন সউদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, সরকারের শরীকরা কেন নির্বাচনে প্রার্থী দেননি তা আমার জানা নেই। তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে হয়তো তারা প্রার্থী দেয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসলে লড়াইটা প্রতিদ্বন্দিতামুলক হয়ে উঠতো। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী বলেও আওয়ামী লীগের এই প্রাবীন নেতা দাবী করেন।

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট এম এম মজিদ বলেন, এই সরকারের আমলে সব ভোদের কদর কমে গেছে। ভোটাররা মাঠে যায় না। একতরফা ডামি নির্বাচন হয়। বলা যায় মানুষের কল্যান তো নয়ই, দেশের গনতন্ত্র ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ করাই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য।