উসকানিতে নিজের রুটি-রুজির সংস্থান ধ্বংস করবেন না: শেখ হাসিনা

কারও উসকানিতে নিজের রুটি-রুজির সংস্থানকে ধ্বংস না করতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে মালিকদের বিলাসিতার কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকের কল্যাণে ব্যয় করার অনুরোধ করেন তিনি।
বুধবার (০১ মে) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মে দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা জানান।

সমস্যা হলে শ্রমিকদের তা জানানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো সমস্যা হলে সেটা বলবেন কিন্তু কারও প্ররোচনায়, কারও উসকানিতে নিজের রুটি-রুজি যেখান থেকে আসবে, ভাতকাপড় আসবে, কর্মসংস্থান হবে, সেটাকে যেন কোনোরকম ধ্বংস করা না হয়।

সেটার প্রতি আপনারা অবশ্যই যত্নবান হবেন। আর মালিকদেরও বলবো, আপনারা আপনাদের বিলাসিতার কিছু অংশ ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকের কল্যাণে দেখবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে শ্রমিক শ্রেণির দাবির জন্য বা কথা বলার জন্য তো আমরা আছি। আমরা কিন্তু বলি।

আমি প্রধানমন্ত্রী শুধু না, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমি সেভাবেই নিজেকে বিবেচনা করি। আপনাদের কোনো অসুবিধা যদি হয়, আমি জানি, আমার দুয়ার খোলা। আপনারা যোগাযোগ করতে পারেন। আমাদেরও শ্রমিক সংগঠন আছে। কাজেই সেগুলো আমরা দেখব। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু কিছু ভাড়াটে লোক আমি বলব, কথায় কথায় তারা শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করেন। এখন যে কারখানা আপনার ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করছে, কাজের ব্যবস্থা করছে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করছে, সেই কারখানা নিজেরা যদি ধ্বংস করতে যান, ভাঙচুর বা আগুন দেওয়া—এ ধরনের কাজ করেন। এতে কার ক্ষতি হচ্ছে? নিজের ক্ষতি হচ্ছে, পরিবারের ক্ষতি হচ্ছে, দেশের ক্ষতি হচ্ছে, মালিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে। তবে মালিকদের তো আর ওই একটা ব্যবসা থাকে না, আরও ব্যবসা থাকে। তারা হয়ত পুষিয়ে নিতে পারেন কিন্তু আপনাদের নিজেদের ক্ষতি তো নিজেরা করেন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রেতাদের পণ্যের দাম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা আমাদের গার্মেন্টস কেনে বা আমাদের উৎপাদিত পণ্য কেনে  তাদেরকেও বলব, এখন তো সব জায়গায় ইনফ্লেশন বেড়ে গেছে, জিনিসের দাম বেড়ে গেছে, একটা পিস গার্মেন্টস তৈরি করতে খরচও বেড়ে গেছে। সেটা বিবেচনা করে যারা বায়ার, তারা যদি একটু মূল্যটা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমি মালিকদের ওপর আরও চাপ দিতে পারি, আমাদের শ্রমিকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য।

আইএলও শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে মালিকদের বিষয়ও দেখবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশে নারী-পুরুষ সমান মজুরি পায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মক্ষেত্রে পৃথিবীর অনেক দেশে আছে, অনেক উন্নত দেশেও নারীরা কিন্তু সমমজুরি পায় না। বাংলাদেশে নারীরা সমান মজুরি পায়। আজকে আমাদের কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৪৩ দশমিক এক ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ছিল মাত্র ২২ দশমিক ৮১ ভাগ। আমরা কিন্তু সেটা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। এখন মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে কাজ করতে পারে, সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা করেছি।

আওয়ামী লীগ খেটে খাওয়া মানুষের দল মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ কিন্তু ওই ক্ষমতার উত্তরণ ঘটিয়ে আসেনি, মাটি-মানুষের থেকে এসেছে। কাজেই আমরা আমাদের দেশের মানুষের জন্য কাজ করি।

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আইএলওর কনভেনশন যতগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছিলেন, এর পরে বাকি যতগুলো কনভেনশন এবং প্রটোকল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই সেগুলো আমরা সই করেছি। এটা কিন্তু আমরা করেছি, এমনকি আমেরিকাও কিন্তু করে নাই। যদিও তারা প্রশ্ন ওঠায় আমাদের কাছে শ্রমিকের কল্যাণ…আমি যদি জিজ্ঞাসা করি তারা কয়টা আইএলও কনভেনশন বা প্রটোকল সই করেছে? তারা বোধ হয় জবাব দিতে পারবে না। খুব বেশি হলে বোধ হয় দুটি করেছে, তার বেশি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) যদি কেউ আন্দোলন করে সাথে সাথে চাকরি শেষ। আর আমরা আন্দোলন করলে তাদের সঙ্গে বসি, কথা বলি, সমস্যাগুলো সমাধান করি। এখানেই বিরাট তফাত। সে জন্য আমাদের ওপর অনেক খবরদারি করার চেষ্টা করা হয়।