চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে দাম কমবে: খাদ্যমন্ত্রী

চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করতে ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করলে চালের দাম কমবে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) খাদ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্য পর্যটন নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী মেডিটেক্স, হেলথ ট্যুরিজম, ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রো বাংলাদেশ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

একযোগে শুরু হওয়া এ আটটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ)।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এক কেজি চালও আমদানি করতে হয়নি।

বরং উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হয়েছে। এখন আমরা অনায়াসে ৫-৭ লাখ টন চাল রপ্তানি করতে পারি, সে অবস্থা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের শুধু পালিশ করে যে চাল নষ্ট হচ্ছে সেটা অর্ধেক রপ্তানি করলেই হবে। কারণ উৎপাদিত প্রায় চার কোটি টনের মধ্যে তিন শতাংশ হারে প্রায় ১২ লাখ টন চাল পালিশ করার কারণে অপচয় হচ্ছে।

আমাদের চাল পাঁচ দফা পালিশ করে চকচকে করা হচ্ছে। দুবার পালিশ করলেও ৫-৭ লাখ টন চাল বাড়বে।

দফায় দফায় পালিশ করার কারণে চালের মধ্যে শুধু কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অন্য কোনো পুষ্টি থাকছে না জানিয়ে তিনি বলেন, এতে বিদ্যুৎ, শ্রমিকের মজুরি সবকিছু মিলে প্রতি কেজিতে প্রায় চার টাকা খরচ পড়ছে। যে ভার ভোক্তাকে বহন করতে হচ্ছে। চালের দামে এ খরচ যুক্ত হচ্ছে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন আইন করে এ পালিশ বন্ধ করছি, মিনিকেট বা বিভিন্ন নামে চাল বাজারজাত করাও বন্ধ করেছি। ভোক্তাদের আমি বলব, আপনারা চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করুন। তাহলে যেমন চালের দাম কমবে, আমরা চাল রপ্তানি করতেও সফল হবো। এ আইন কার্যকর হওয়ার পর আগামী আমন মৌসুম থেকে চাল পালিশ করলে মিল মালিকরা জরিমানার শিকার হবে। আসুন সবার প্রচেষ্টায় আমরা চাল রপ্তানির প্রস্তুতি নিই।

সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ অ্যান্ড এশিয়া প্যাসিফিক এর প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর মেহেরুন এন. ইসলামের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ. এইচ, এম. আহসান।

আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ হাসান আরিফ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) পরিচালক (বিপণন, নকশা ও কারুশিল্প) আব্দুন নাসের খান।

সেমস-গ্লোবাল ইউএসএ আয়োজিত এ প্রদর্শনী প্রতিদিন চলবে আগামী শনিবার (১১ মে) পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

প্রদর্শনী আয়োজকরা জানান, তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে থাকছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অস্ত্রোপচার ও ডেন্টাল যন্ত্রপাতি, হাসপাতালের সরঞ্জাম ও সরবরাহ কেন্দ্রিক ‘১৫তম মেডিটেক্স বাংলাদেশ ২০২৪ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’, ‘৮ম বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল ল্যাব এক্সপো ২০২৪’, এবং ‘১০তম ফার্মা বাংলাদেশ ২০২৪ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো’। আরও অনুষ্ঠিত হবে স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল ট্যুরিজম ও তৎসংশ্লিষ্ট সেবা সম্পর্কিত বাংলাদেশের একমাত্র ও বৃহত্তম প্রদর্শনী ‘৭ম ইন্টারন্যাশনাল হেলথ ট্যুরিজম অ্যান্ড সার্ভিসেস এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৪’। স্বাস্থ্য পর্যটন এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ও সেবা নিয়ে স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, দেশি-বিদেশি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের সহযোগিতা বিষয়ক এ প্রদর্শনীসমূহে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, তুর্কিয়ে, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও শ্রীলংকাসহ ১৫টিরও অধিক দেশের ৩৫০ টিরও অধিক বুথ নিয়ে প্রায় ১৫০টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে।

একই সময়ে আরও অনুষ্ঠিত হবে খাদ্য ও কৃষিজ্ঞ যন্ত্রপাতি, খাদ্য ও পানীয় পণ্য এবং প্যাকেজিং সামগ্রী সম্পর্কিত শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘৭ম ফুড বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৪’, ‘৭ম অ্যাগ্রো বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৪’, একইসাথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘৭ম পোল্ট্রি অ্যান্ড লাইভস্টক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো ২০২৪’ এবং ‘৪র্থ ফুড প্যাক এক্সপো ২০২৪’। খাদ্য, কৃষি ও প্লাস্টিক শিল্প জগতের অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, উন্নত প্রযুক্তি, পণ্য এবং পরিষেবা বিষয়ক এ প্রদর্শনীসমূহে বাংলাদেশ, তুকিয়ে, ভারত, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকা ও চীনসহ ১০টিরও অধিক দেশের ২৫০ টিরও অধিক বুথ নিয়ে প্রায় ১০০টি কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে। এসব প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনও (বিসিক) অংশগ্রহণ করছে।

আয়োজকরা আরও জানান- এ প্রদর্শনীসমূহ সংশ্লিষ্ট শিল্পের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জন্য একটি ওয়ান স্টপ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। বৈশ্বিক পরিসরে পারস্পরিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি আদান-প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য পর্যটন, খাদ্য ও কৃষি খাতের অগ্রগতিতে প্রদর্শনীসমূহ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

প্রদর্শনী চলাকালে আইসিসিবির নবরাত্রি হলে ‌’স্ট্র্যাটেজিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর এক্সপোর্টিং ম্যাংগোজ ফ্রম বাংলাদেশ’, ‘দ্য ফিউচার অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার ইন বাংলাদেশ’, ‘ড্রাইভিং বিজনেস গ্রোথ ধ্রু ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ এবং ‘দ্য জার্নি অব ডাইনামিক গ্রোথ’ শীর্ষক ৪টি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।